খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ মাঘ, ১৪৩১ | ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  প্রাথমিকে ৬৫৩১ সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ হাইকোর্টে বাতিল
  ঘন কুয়াশায় গোপালগঞ্জে চার গা‌ড়ির সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত অন্তত ২০
  সকালেও চলছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার কাজ

বাগেরহাটে টয়েলেট থেকে গৃহবধুর বস্তাবন্ধী মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটে নিখোজের সাতদিন পর টয়েলেট থেকে ফিরোজা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (০৫ আগস্ট) বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার দেওয়ানবাটি এলাকায় নিহতের বাড়ি থেকে এই মরদেহ উদ্বার করা হয়। এর আগে দুপুর দেড়টায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে ওই নারীর স্বামী মোহাম্মাদ আলী হোসেন (৩৭) কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে দশটা থেকে নিখোজ ছিল ফিরোজা বেগম। এর চার দিন পরে বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) নিজের স্ত্রীকে নিখোজ দাবি করে বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন মোহাম্মদা আলী হোসেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে মোহাম্মাদ আলী হোসেন। পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যার শিকার ফিরোজা বেগম দেওয়ানবাটি গ্রামের গফুর মোল্লা ওরফে ছুইটের মেয়ে। বছর দেড়েক আগে মাত্র দুই দিনের পরিচয়ের সূত্রে শহরের নাগেরবাজার এলাকায় আজিজ মোল্লার ছেলে মোহাম্মাদ আলী হোসেনকে বিয়ে করেন স্বামী পরিত্যক্তা ফিরোজা বেগম। ফিরোজা বেগম মোহাম্মাদ আলী হোসেনের ৩য় স্ত্রী। এই ঘরে তাদের কোন সন্তান নেই। ১৭ বছর আগে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে এক মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান ফিরোজা বেগম। সেই থেকে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। আলীকে বিয়ে করে, বাবার ঘরের পাশের ঘরে থাকতেন দুজনে। নিহতের প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে পূর্নিমা বেগম জামাই রায়হান ব্যাপারির সাথে ঝালকাঠি থাকেন।

মোহাম্মাদ আলী হোসেন গ্যাসের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিতেন।

নিহতের চাচা বারিক মোল্লা বলেন, রবিবার (৩০ জুলাই) রাত সাড়ে দশটার দিকে মোহাম্মাদ আলী হোসেন বলে আপনাদের মেয়ে চলে গেল। আমি এসে দেখি রাস্তায় কেউ নেই। আলীর কাছে জানতে চাইলে বলে, অনেকদূর চলে গেছে এখন পাবেন না। পরে আসবে হয়ত। এরপর থেকে আর ফিরোজাকে পাইনি। হয়ত ওইদিনই আলী ফিরোজাকে মেরে টয়েলেটের মধ্যে রেখে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকে আলী খুব বেপরোয়া ছিল। মাঝে মাঝেই ফিরোজাকে মারধর করত।

প্রথম ঘরের মেয়ে পূর্নিমা বেগম বলেন, বিভিন্ন সময়, চারদিন আগে মোহাম্মাদ আলী হোসেন মুঠোফোনে জানায় আমার মাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আসতে চাইলে বলে আসার দরকার নেই। কোথায় জানি গেছে, পাওয়া যাবে। জামাইকে নিয়ে দুপুরে দেওয়ান বাটি আসি। মার ঘরে ঢুকতেই দেখি, টয়েলেটের চারপাশে নতুন মাটি এবং একটা ভয়ঙ্কর গন্ধ আসতেছে। সে আমার মাকে মেরে, টয়েলেটের মধ্যে রেখেছে। আমি আমার মাকে হত্যার বিচার চাই।

পূর্নিমা আরও বলেন, বিয়ের পর থেকে মোহাম্মাদ আলী হোসেন আমার মাকে মারধর করত। মা আলীকে দুটো মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছে। আলী মার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেকবার মাকে মেরেছে। একবার প্লাস দিয়ে মার দাত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে।

নিহতের মেয়ের জামাই রায়হান ব্যাপারি বলেন, দুপুরে ঘরে ঢুকে কিসের গন্ধ জানতে চাইলে মোহাম্মাদ আলী হোসেন আসতেছি বলে দ্রুত বেরি যায়। তখন বুঝতে পারি কিছু একটা ঘটেছে। আলীর পিছনে দৌড় শুরু করি, এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু দূর গিয়ে আলীকে ধরে ফেলি। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে আলীকে আটক করে। আমরা আলীর বিচার চাই।

আলী একা এই হত্যা করতে পারেনি দাবি করে রায়হান ব্যাপারি বলেন, আমার শ্বাশুরী অনেক মোটা। তাকে মেরে একা টয়েলেটের মধ্যে ঢুকানো সম্ভব না। আলীর সাথে অন্য কেউ আছে হয়ত। তদন্ত করে দেখার দাবি করেন তিনি।

আলীর সাথে পরিচয় সম্পর্কে নিহতের চাচা বারিক মোল্লা বলেন, ফিরোজা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করতে গেছিল। তখন আলীর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের দুই-তিনদিনের মধ্যে তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে ফিরোজাকে নিয়ে আমার ভাইয়ের বাড়িতেই থাকত আলী।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমার আলীকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে হত্যার মূল কারণ ও হত্যার সাথে অন্যকেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!