খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

বাগেরহাটে টিকাদান কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনা, ফিরে যাচ্ছেন গ্রহীতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাট সদর হাসপাতাল করোনা টিকাদান কেন্দ্রে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অব্যবস্থাপনার কারনে টিকা না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে গ্রহীতাদের। একদিকে বিশৃঙ্খল সারিতে শতশত শিক্ষার্থীর জটলা অপরদিকে প্রচন্ড চাপে দমবন্ধ অবস্থা প্রায়। এমন পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন অনেকে। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রেড ক্রিসেন্ট এর স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করতে অপরাগতা প্রকাশ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেডক্রিসেন্ট এর একাধিক কর্মী জানান, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা অভিভাবক ও শিক্ষক পরিচয় দেওয়া অনেকেই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের গালাগাল এমনকি মারতে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘঠেছে। এছাড়া টিকাদান কেন্দ্রে বাড়তি সুবিধা না দেওয়াতেই কোনো কোনো প্রভাবশালীরাও তাদের গালাগাল করে, হুমকি দেয়। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা কেন্দ্রের সব ধরণের কার্যক্রম থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই পরিস্থিতে ভিড়ের কারণে বেলা ১২টার দিকে কিছু সময় বন্ধ ছিল টিকাদান।

শিক্ষার্থী ছাড়াও সদর উপজেলার সাধারণ নিবন্ধনকৃতরা করোনার টিকা নিতে আসেন সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে। এমন হুড়োহুড়ি আর বিশৃঙ্খল পরিবেশে টিকা পাননি তারাও। এমনকি নির্ধারিত তারিখে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা অনেককেও ফিরতে হয়েছে টিকা না পেয়ে।

দুই মেয়েকে টিকা দিতে নিয়ে আসা শহরের সরুই এলাকার বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামন ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন, এটা অব্যবস্থাপনা ও কাণ্ডজ্ঞানহীনতা চরম দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছু না। এখানে কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হচ্ছে না। টিকা দান কেন্দ্র যেন মাছের বাজারে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

বাগেরহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিয়া রহমান বলেন, দুই ঘন্টা চেষ্টা করে টিকা দান কক্ষের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। প্রচন্ড চাপে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, তাই আবার বের হয়ে এসেছি। জানিনা আজকে টিকা দিতে পারবো কিনা। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের এক সহপাঠি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ওই শিক্ষার্থীর মা লিলি জামান বলেন, যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে আজ টিকা দিতে পারব না। মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।

টিকা নিতে সকাল ৯টায় এই কেন্দ্রে আসা সদরের কাড়াপাড়া এলাকার রহিমা বেগম (৬২) বেলা সোয়া ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আশপাশের লোকেরা তাকে ধরে নিয়ে হাসপাতালের সিড়িতে বসান। তিনি বলেন, সকাল থেকে দাঁড়ায় আছি। টিকা পাচ্ছিনা। এই বয়সে এসে এমন ভোগান্তি শরীরে সহ্য হচ্ছে না।

রেড ক্রিসেন্ট বাগেরহাট ইউনিটের যুব প্রধান শরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, করোনার টিকা দান শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমরা নিরলস ভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তারপরেও বিভিন্ন সময়ে আমাদের হুমকি-ধামকি শুনতে হয়। তবে কর্ম-বিরতি বা স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

টিকা কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনা ও টিকা না পাওয়ার বিষয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিং এ আছি, পরে কথা হবে বলে সংযোগ কেটে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মী বলেন, টিকা কেন্দ্রে নিয়মশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কাজ করলে প্রভাবশালীদের কথা শুনতে হয়। আপনারা সিভিল সার্জনকে ফোন করার পর তিনিও আমাদের যুবপ্রধানকে ফোন করে বেশি বেশি কথা শুনিয়েছেন। ​

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ কবীর হোসেন আকন বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে বিশৃঙ্খলার কথা শুনে আমরা সেখানে যাই। প্রচন্ড চাপে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলেছি। তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের সেবা দিচ্ছে। তারপরেও কেউ কেউ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সবাইকে নিয়ম মানতে হবে, এই দায়িত্ব সকলের। যখনি টিকা গ্রহীতাদের কেউ কেউ নিয়ম মানতে বা ধৈর্য ধরতে রাজি হন না স্বাভাবিক ভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই শৃংখলা রক্ষার্থে সবাইকে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসনের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর থেকে বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!