বাগেরহাটে নেদারল্যান্ডের সুন্দর্শন ফুল লিলিয়ামের চাষ শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মত বিদেশী এই ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ। প্রত্যন্ত গ্রামে ফোটা এই ফুল নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই। ফুল দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন ফয়সালের বাগানে।ফুল বিক্রি করে ভাল লাভের আশা করছেন চাষী ফয়সাল। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন জেলায় লিলিয়াম ফুলেল চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
উদ্যোক্ততা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, লিলিয়াম ফুল চাষের আগ্রহ থেকে বীজের জন্য লাল তীর নামের একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের মাধ্যমে জানতে পারি এই ফুলের বীজ হয় না। লালতীরের সহযোগিতায় নেদারল্যান্ডস থেকে ২০০ টি কন্দ এনে চাষ শুরু করি। জমি প্রস্তুত করে এক শতাংশ জমিতে ৩০ অক্টোবর পরীক্ষামুলকভাবে কন্দগুলো রোপন করি। সাধারণত দুই মাসে ফুল আসার কথা থাকলেও, আমার জমিতে মাত্র ৩৪ দিনে বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছে। আশাকরি ১৬ ডিসেম্বর, নববর্ষ ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাল দামে এই ফুল বিক্রি করতে পারব।
ফয়সাল আরও বলেন, যতদূর জেনেছি, এটা খুব দামি ফুল। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। ইতোমধ্যে অনেক কৃষকরা আসছেন চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রতিদিন ফুলক্ষেত দেখতে আসছেন দূর দূরান্ত থেকে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অনেকে ফুলের সাথে ছবি তুলছেন । প্রথম বারের মত এই ফুল দেখে অনেকে উচ্ছাসিত।
ফুল দেখতে আসা লাভনী নামের এক তরুনী বলেন, এর আগে ইউটিউবে দেখেছি, আজ স্ব-চোখে দেখলাম,ছবি তুললাম। ফুল দেখে অনেক ভাল লাগলো। আমরা চাই এই ফুলের চাষ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।
লালতীর সীড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার আউয়াল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিদেশীদের সাথে তালমিলিয়ে কৃষকদের সবজীসহ নানা কৃষি পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে নিতে। সম্প্রতি লেদারল্যান্ড থেকে লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) এনে চাষিদের দেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ভাল উৎপাদন হওয়ায় বিদেশী জাতের লিলিয়াম ফুল সম্ভবনাম দেখা গেছে। আশাকরি এই ফুলের উৎপাদন বাড়লে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো রপ্তানী করে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জন করবে। এজন্য আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেদারল্যান্ড, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার শীত প্রধান দেশগুলোতে লিলিয়াম ফুলের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। সাধারণ সাদা, হলুদ, কমলা, গোলাপী, লাল ও বেগুনী বর্ণের লিলিয়াম ফুল দেখা যায়। এ ফুলের বর্ণচ্ছটা অনেকটা চিত্রের মতো। দেখতে কোনও শিল্পী তাঁর তুলি দিয়ে ফুলের গায়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। এ জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে যারা বেশ প্রসারিত হয়। অভিজাত এলাকায় এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশকিছু ঔষধীগুনও রয়েছে এই ফুলের। কৃষি বিভাগের পরামর্শে মোল্লাহাটের গাফরা গ্রামের এক কৃষকের ক্ষেতে এই ফুল ফুটেছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর মজুমদার বলেন, লিলিয়াম ফুল বর্ণ বৈচিত্র ও সুন্দর আকারের কারণে বাংলাদেশেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা প্রতিটি ফুল আমাদের দেশে দুই থেকে তিনশ টাকায় বিক্রি হয়। আশাকরি জেলাব্যাপী লিলিয়াম ফুলের চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে কৃষকরা অল্প সময়ের মধ্যে চাষ করে লাভবান হতে পারে।
খুলনা গেজেট/ টিএ