খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

বাগেরহাটে খাল খননে সড়কে ভাঙ্গন, অপরিকল্পিত মাটি ফেলানোতে দূর্ভোগ এলাকাবাসির

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারীতে হক ক্যানেল (কাটা খাল)খননের ফলে নালুয়া-ভোলা সড়কের কয়েকশ ফুট ধ্বসে গেছে। খননকৃত মাটিতে খাল ও সড়কের পাশে বসবাসরত অনেকের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। মাটির নিচেও পরেছে কয়েক জনের ঘর। সড়ক ধ্বসের ফলে স্বাভাবিক চলাচলও ব্যহত হচ্ছে স্থানীয়দের। এক ধরণের অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে শতাধিক পরিবার।

স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও খননকারী কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেও কোন প্রতিকার পায়নি হতদরিদ্র মানুষগুলো। এদিকে খননকারী কর্তৃপক্ষ বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য ভারতে থাকায় অধিনস্ত কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তবে জেলা প্রশাসন বলছে স্থানীয়দের ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন কাজ হতে পারে না।

৪ কিলোমিটারের নালুয়া-ভোলা সড়কটির পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া হক ক্যানেল (কাটাখাল)। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক খালটি খননের ফলে সড়কটির একাধিক স্থানে কয়েকশ ফুট ধ্বসে গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। স্কেভেটর দিয়ে ফেলা খননকৃত মাটিতে অনেকের ঘর ভেঙ্গে গেছে। কারও ঘর আাবার মাটির নিচে চলে গেছে। একটা চরম দতূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ১১টি ঘরের বেশিরভাগ অংশ মাটির নিচে চলে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

খননকৃত মাটির নিচে থাকা বাড়ির মালিক আকুব্বর শেখ, আনোয়ার সরদার, আমিনুর শেখ, সামাদ ব্যাপরিসহ কয়েকজন বলেন, খাল খননের আগে আমাদেরকে কোন সময় দেয়নি কন্ট্রাক্টর। আমরা বলেছিলাম এভাবে মাটি রাখলে আমরা কোথায় থাকব। আমাদের কোন কথা না শুনে ইচ্ছেমত মাটি ফেলে গেছে। এখন আমরা এক প্রকার অবরুদ্ধ রয়েছি। মাটির নিচে আমাদের কয়েক জনের ঘর ও মূল্যবান আসবাবপত্রও চলে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের কাছে গেছি তারাও কোন প্রতিকার দিতে পারেন নি। যারা খননকাজে নিয়োজিত তারা প্রতিনিয়ত আমাদের উপর অন্যায় করছেন।

স্থানীয় রোজিনা বেগম ও রাহেলা বেগম বলেন, রাস্তার পাশেই আমাদের ছোট টিনসেড বিল্ডিং। খাল খননের মাটিতে যাতে আমাদের ভবনের খতি না হয় এ জন্য কন্ট্রাক্টরের লোক উজ্জলকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরও মাটি দিয়ে আমাদের বিল্ডিংয়ের ক্ষতি করেছে।

স্থানীয় পারুল বেগম বলেন, খালের মাটি এমন ভাবে রেখেছে যে আমাদের ঘরের একটা অংশ মাটির নিচে চলে গেছে। পরে প্রায় ৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঘরের মাটি সরিয়েছি। কিন্তু মাটি সরালেও ঘরটি অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এদিকে ধ্বসে যাওয়ার ফলে চিতলমারী উপজেলা বাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নালুয়া-ভোলা সড়কে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। মারাত্মকদূর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা।ভ্যান ও সাইকেল ছাড়া অন্যকিছুও চলাচল করতে পারছে না ওই সড়ক দিয়ে।

রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন ভ্যান চালক বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে এই রাস্তা ধ্বসে গেছে। আমাদের ভ্যান চালানোও বন্ধ। আসলে রাস্তা ধ্বস ও মানুষের বাড়ি ঘরে মাটি ফেলায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা বর্ণনা করা যায় না। খাল খনন করবে তো আমাদের উপকারের জন্য। কিন্তু এখন দেখছি এভাবে থাকলে আমাদের এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। অতিদ্রæত সময়ের মধ্যে ধ্বসে যাওয়া রাস্তা মেরামত করে এলাকার মানুষের দূর্ভোগ নিরসনের দাবি করেন তারা।

শিক্ষার্থী আসিকুর ফকির ও ময়না খানম বলেন, মাটি ফেলার ফলে আমাদের চলাচল একদম বন্ধ হয়ে গেছে। মাটিতে আমাদের ঘর বাড়িও ভেঙ্গেছে। এলাকার অনেকের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা চাই আমরা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কৃষ্ণেন্দু বিকাশ সরকার বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তবে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য মহোদয় ভারতে অবস্থান করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে আমরা কোন কথা বলতে পারব না।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ.ন.ম ফয়জুল হক বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণকে সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্যই খাল খনন করা হচ্ছে। খালের পাশে অনেক খালি জমি রয়েছে। খাল খননের ফলে যাতে স্থানীয় জনগন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!