বাগেরহাটে সন্ত্রাসী হামলায় আওয়ামীলীগ নেতা আনারুল শেখ ওরফে আনা (৫৫) নিহত হওয়ার ৩০ ঘন্টা পার হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। রবিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মামলা হয়নি।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যা নাগাদ নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এসময় স্বজনদেও আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠে।স্বজনরা খুনীদের শাস্তি দাবি করেছে। রাতে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার মেরিন ইনস্টিটিউটের সামনে নাগের বাজার এলাকার সোহেল হাওলাদার ওরফে কালা সোহেল ও রাখা হাওলাদারসহ ৭-৮জন সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ নেতা আনারুল শেখ ওরফে আনা‘র উপর হামলা করে। আনাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আনারুল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলার আগে শহর থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল হাওলাদার ওরফে কালা সোহেলের নেতৃত্বে চারটি মোটরসাইকেলে রামদা, হকিস্টিক, লোহার রডসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দড়াটানা সেতু পার হয়ে নদীর ওপারে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে যান ৭-৮জন। হামলার আগে ও পরে শহরের মধ্যে প্রকাশ্যে মহড়া দেন তাঁরা। দড়াটানা সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ও অনেকে তাদের দেখেন। প্রকাশ্যেই ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মারপিট করা হয়। মারধরের পর তাঁকে সেখানে ফেলে উল্লাস করেন তাঁরা।
নিহততের ছোট ভাই বাচ্চু শেখ বলেন, কালা সোহেলের খালুর সাথে বিরোধ ছিল আমার । মেঝ ভাইয়ের (আনারুল) সাথে তাদের কোন বিরোধ ছিল না। তারপরও তারা ভাইকে মেরে ফেলল। কালা সোহেল আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদার টাকা না দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ায় তাঁরা হামলা করেন।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আনা বাগেরহাট পৌর শহরের বাসাবাটি এলাকার আব্দুল গনি শেখের ছেলে। তিনি বাগেরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। মূলত আনারুল শেখের ছোট ভাই বাচ্চু শেখের সাথে ঘের নিয়ে বিরোধ ছিল কালা সোহেলের খালু কালাম বয়াতীর। সেই জেরেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। তবে বিরোধপূর্ণ ঘেরটি সরকারি না মালিকানাধীন জমিতে এই নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর এলাকার চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের পেছনের একটি সরকারি খাল দখলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘের করতেন প্রভাবশালীরা। এই ঘের দখল নিয়ে বাচ্চু শেখ ও কালাম বয়াতীর মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরেই হত্যাকান্ড ঘটে। দুই পক্ষই সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত।
অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদার বাগেরহাট সদর উপজেলার নাগেরবাজার এলাকার রশীদ হাওলাদারের ছেলে। তিনি বাগেরহাট পৌর যুবলীগের ১ নম্বর সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত।ঘটনার পর তিনি পালাতক আছেন। তাঁর বাড়িতেও কাউ নেই।
বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলাম ওরফে আনা’র খুনীদের গ্রেফতারের জন্য জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ না নিয়ে আসায় এখনো মামলা হয়নি। হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি