বাক্স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত রাখতে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নয়টি মানবাধিকার সংস্থা। শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থাগুলো যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের প্রতি সরকারকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
নয়টি মানবাধিকার সংস্থা হলো, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি), এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল), সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইলিয়স জাস্টিস-মোনাশ ইউনিভার্সিটি, এফআইডিএইচ: ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ওএমসিটি: ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, লেখক মুশতাক আহমেদকে (৫৩) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিতেন ও আলোচনা করতেন, যা সরকারের কাছে সমালোচনামূলক মনে হয়। কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় জীবনের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
যৌথ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লেখক মুশতাক আহমেদের মতো কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও (৪৫) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ মাস কারাগারে থাকার পর ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেফাজতে আহমেদ কবির কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছে এমনটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট জোরালো কারণ রয়েছে। আহমেদ কবির কিশোর ডান কানে শুনতে পাচ্ছেন না। বাঁ হাঁটুতে ও গোড়ালিতে ব্যথা থাকায় তাঁর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। বন্দী থাকা অবস্থায় আহমেদ কবির কিশোরের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল। জরুরি চিকিৎসা দেওয়া না হলে তিনি দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যৌথ বিবৃতিতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগের দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই শনাক্ত করতে হবে ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আহমেদ কবির কিশোরের নিঃশর্ত ও স্থায়ী মুক্তি দাবি করেছে। মুক্ত বাক্স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানুষের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণ ও বিচারের আগেই আটক রাখার মতো ঘটনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মুশতাক আহমেদ ও আহমেদ কবির কিশোরের মতো শতাধিক ব্যক্তি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আটক হয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে করতে হবে।
যৌথ বিবৃতিতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের সহিংস আচরণে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই