খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু
আইসিজের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সঙ্কটময় মুহূর্তে, প্রয়োজন রাজনৈতিক মতৈক্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশ একটি সঙ্কটময় মুহূর্তে আছে। ত্রুটিপূর্ণ হলেও এক সময়ের প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশের এই দেশে শিগগিরই ক্ষমতাসীন সরকারের গ্রহণযোগ্য প্রতিপক্ষ ছাড়াই তৃতীয় একটি নির্বাচন হতে চলেছে। নিজের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান দেশে নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াবে।

এই পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনায় বসতে হবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উভয়পক্ষের মতৈক্য দরকার। সেজন্য বাংলাদেশের বিদেশি অংশীদার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচিত হবে দলগুলোকে সে পথে এগোনোর জন্য উৎসাহিত করা।

ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজে) বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে তাদের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই অভিমত দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা স্বাধীন ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান আজ বৃহস্পতিবার ‘বিয়ন্ড দ্য ইলেকশন: ব্রেকিং বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল ডেডলক’ শীর্ষক ৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। আইসিজে ই-মেইলে ওই প্রতিবেদনের তথ্য জানিয়েছে। তাতে বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

কোন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বৈরিতা তৈরি হলো এবং এ থেকে উত্তরণের পথ কী, তা তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকার মধ্যে অনেকটাই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের দমন-পীড়ন এবং বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার উত্তেজনার বিস্তার ঘটায়। তা বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের পথে ঠেলে দিয়েছে।

আইসিজে বলেছে, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে নির্দয়ভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সরকারের অধীনেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন, নতুন করে উজ্জীবিত বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি একতরফা নির্বাচন আয়োজনকে কঠিন করে তুলেছে।

ব্রাসেলসভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের ফলে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। ব্যালটে তেমন বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প না থাকায় অসন্তুষ্ট বাংলাদেশিরা রাজপথে নামছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ভেতরেই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যেই হাঙ্গামা সৃষ্টি হতে পারে।

নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের এমন মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষিতে সমাধানের পথ হিসেবে দুই পক্ষকে ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। আইসিজে বলেছে, জানুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ভোটের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাজ করা উচিত। এটা হতে হবে দুই পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের বিদেশি অংশীদারদের দুই দলকে উৎসাহিত করা উচিত হবে।

আইসিজের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক পিয়েরে প্রকাশ বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করবে না। আবার ভোট স্থগিত করার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদের ভোটের পর আবার আলোচনার টেবিলে বসার জন্য বাড়তি চেষ্টার বিষয়টিকে আরও যৌক্তিক করে তুলছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। এরপর থেকে বাংলাদেশে কোনো বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়নি। যদিও বাংলাদেশ গত ১৫ বছরে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। একই সময়কালে দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার অবদমন অব্যাহতভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।’

পিয়েরে প্রকাশ বলেন, দুই দলের মাঝে নতুন করে এক ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এটা নতুন রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে পারে, যে সহিংসতায় শুধু গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রধান দুই দলের নতুন এই রাজনৈতিক বোঝাপড়া (গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফেরা) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারসাম্য আনতে এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার উন্নয়নে সাহায্য করবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!