বাংলাদেশকে দেয়া গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ভারত। এই ট্রানজিটটি ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে সহায়তা করত। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জারি করা সার্কুলার নং ১৩/২০২৫-কাস্টমস এর মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, যার ফলে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্রুত এবং স্বল্প খরচে বাণিজ্য করার একটি কার্যকর পথ বন্ধ হয়ে গেল। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মাবলীর অধীনে ভারতের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পূর্বের সার্কুলার নং ২৯/২০২০-কাস্টমস বাতিল করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি পণ্যের ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন (এলসিএস)-এর মাধ্যমে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরে ট্রানশিপমেন্টের অনুমতি দিতো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ এপ্রিল ঘোষিত পারস্পরিক শুল্কের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার মাঝে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। খবর দ্য লাইভমিন্টের।
বাংলাদেশের জন্য এটি বড় ধরনের ধাক্কা বলে দাবি ভারতীয় পক্ষের। কারণ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানি সহজ ও সাশ্রয়ী ছিল।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে ট্রানজিট সুবিধা অবিলম্বে বাতিল করা হয়েছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘এই পদক্ষেপের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে সহায়তা করে এসেছে, তবে এই সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে যে অর্থনৈতিক সুবিধা কখনও জাতীয় নিরাপত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়,’ তিনি মিন্ট-কে বলেন। ‘বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি হওয়ায় এটি ভারতের ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।’
লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটিটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেনস নেক’-এর খুব কাছে, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে কৌশলগত সহযোগিতার চেষ্টা করছে এমন প্রতিবেদনে নয়াদিল্লিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও নেতিবাচক প্রভাব
এই ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভুটান ও নেপাল, দুটি স্থলবেষ্টিত দেশ যারা ভারতের ওপর বাণিজ্যিকভাবে নির্ভরশীল, তারাও বাংলাদেশ সংযুক্ত করিডোর বন্ধ হওয়ায় নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে।
ভারত এখনো এই দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট অংশীদার হলেও, হঠাৎ করিডোর বন্ধ করে দেয়ায় কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং সরবরাহ চেইনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। মিয়ানমারও, যেটি ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানির একটি গন্তব্য, বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধির মুখোমুখি হতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিও।
‘এটি বাংলাদেশি রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ও বিলম্ব ঘটাতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য স্বপ্নেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে,’ বলেন শ্রীবাস্তব। ‘এমনকি আলোচনার বিষয় হতে পারে যে ভারত এখনও ডব্লিউটিওর-এর অধীনে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য ট্রানজিট দায়িত্ব পালন করছে কিনা।’
খুলনা গেজেট/এএজে