সাত মাস আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। গত জুলাইয়ে পূর্ণ শক্তির দল না পেলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল স্বাগতিকরা। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমকে পেয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ফলে স্পিননির্ভর আফগানদের বিপক্ষে পুরো শক্তির দল পাওয়াটা অধিনায়ক তামিমের জন্য স্বস্তিরও। ইতিবাচক মানসিকতা হৃদয়ে ধারণ করে আজ (বুধবার) তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের সাগর পাড়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল ১১টায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।
আইসিসির ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ বলে দুই দলের তিন ম্যাচের এই সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ানডে সুপার লিগে ভালো অবস্থায় আছে দুই দলই। ১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে বাংলাদেশ। অন্যদিকে আফগানিস্তানের ৬ ম্যাচের সবকটিতে জিতে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে। দুই দলের সামনে সুযোগ সিরিজটি জিতে আরও এগিয়ে যাওয়ার।
সাত মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলার মধ্যেই ছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিপিএল শেষে বিশ্রামের সুযোগ পাননি মুশফিক-সাকিবরা। ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেন। সোমবার প্রথম দিন অনুশীলনের পর ২১ ফেব্রুয়ারি পুরো দলের ছুটি ছিল। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সাগরিকায় কঠোর অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। এদিন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে কাজ করেছেন ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেওয়া জেমি সিডন্স। সকালের পুরো সময়টাতে এই দুই কোচ তাদের শিষ্যদের নিয়ে কাজ করেছেন।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প চিন্তা করছে না বাংলাদেশ। তবে বেশ কয়েকবার র্যাঙ্কিংয়ে পেছনে থাকা দলটির বিপক্ষে হারতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। ঠাণ্ডা মাথায় আফগানদের মোকাবিলা করতে মুখিয়ে তামিমবাহিনী। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য বাংলাদেশ এগিয়ে। ৮ ম্যাচ খেলে পাঁচটি জিতেছে বাংলাদেশ, বাকি তিনটি জিতেছে আফগানরা। ২০১৪ সালে ফতুল্লাতে প্রথম মুখোমুখিতেই আফগানরা জিতেছিল। এরপর ২০১৬ সালে মিরপুরে এবং ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে আবুধাবিতে শেষবার হেরেছিল বাংলাদেশ।
শক্তি-সামর্থ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও আফগানিস্তানকেও পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ম্যাচের যেকোনও পরিস্থিতিতে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে পিছপা হয় না। বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচের সাফল্য ধরে রাখতে দলগত পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই তামিমদের সামনে। তবে আফগান স্পিনাদের সুযোগ কম দিতেই চট্টগ্রামের পয়মন্ত ভেন্যুতে ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করেছে বিসিবি। তামিমও আশা করছেন এখানে রান উৎসব হবে, ‘চট্টগ্রামের উইকেট তো সাধারণত ভালোই হয়। বিপিএলেও ভালোই ছিল। স্পোর্টিং উইকেট আশা করছি, যেখানে পেসার, ব্যাটার সবার জন্য সহায়তা থাকবে।’
উইকেট যেমনই হোক, স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের হুমকি হয়ে উঠতে পারে আফগান তিন স্পিনত্রয়ী। সর্বশেষ এই মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছিল বাংলাদেশ দল। রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবীর ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ওয়ানডে সিরিজে এই দুই স্পিনারের সঙ্গে অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান আছেন। সব মিলিয়ে তাই কঠিন পরীক্ষায় বসতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
তামিম অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও বোলারকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে চান না, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনও বোলারকে নিয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে চাই না। যেটা বললাম- তাদের বোলিং অনেক ভালো, সম্ভবত সেরা স্পিন অ্যাটাক তাদেরই। কিন্তু এদের বিপক্ষেই আমরা অতীতে অনেক ভালো করেছি, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আবার কেন করতে পারবো না? প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। আপনারা তিনজনের নাম বলেছেন, কিন্তু তারা বল করবে ৫০ ওভার। বাকি যে দুজন বল করবে তারাও ভালো। শুধু তিনজনকে নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সহজ বোলার আপনি খুব কমই পাবেন। ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে।’
আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি অবশ্য জানিয়েছেন তাদের স্পিনাররা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দিতে, ‘আমাদের একটি ভালো স্পিন আক্রমণ রয়েছে। বাংলাদেশি উইকেটে স্পিন বোলিং খুব ভালো হয়। আমি আত্মবিশ্বাসী আমাদের স্পিনাররা এখানে ভালো করবে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পেসনির্ভর একাদশই মাঠে নামাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। মোস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদের সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে সুযোগ মিলতে পারে শরিফুল ইসলামের। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে দেখা যাবে লিটন দাসকে। তিন নম্বরে সাকিব আল হাসান, চারে মুশফিকুর রহিম। সবকিছু ঠিক থাকলে পাঁচ নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশন পেতে যাচ্ছেন ইয়াসির আলী। ছয় নম্বরে মাহমুদউল্লাহ। সাতে আফিফ হোসেন ও আট নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজকে দেখার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তিন পেসারের সঙ্গে স্পিন আক্রমণেও ভারসাম্য থাকবে একাদশে।
এদিকে আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে স্টেডিয়ামে ৫০ ভাগ দর্শক ফেরানোর কথা ছিল বিসিবির। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটির কারণে যথেষ্ট পরিমাণ টিকিট ছাপাতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে প্রথম ম্যাচে সাধারণ দর্শকরা মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ না পেলেও পরের ম্যাচ থেকে অন্তত ১০ হাজার টিকিট বিক্রয়ের কথা জানিয়েছেন মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু। মঙ্গলবার নির্ধারিত টিকিট বুথগুলোর সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও সন্ধান পাননি সাধারণ দর্শকরা।
চট্টগ্রামের ছেলে তামিম গ্যালারিতে দর্শক ফেরায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য আমার হৃদয়ে বিশেষ একটা জায়গা আছে। দর্শক থাকলে ভালো। অনেকদিন পর দেশের দর্শকদের সামনে খেলবো। দর্শক কখনও কখনও দ্বাদশ খেলোয়াড় হয়ে ওঠে। আমরা ভালো করি বা খারাপ করি, তারা মাঠে থাকলে সমর্থনের জন্য সর্বোচ্চটুকু করে যান।’