খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ১১৯৫৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। বাজেটে ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে (৭০%-৮০%) একটি আলোকিত-শক্তিশালী-টেকসই মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রূপান্তর করার লক্ষ্ ধরা হয়েছে।

রবিবার (০৩ জুন) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে “বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪—২৫: উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট” উত্থাপন করা হয়।

বিকল্প বাজেটের মোট আকার (পরিচালন ও উন্নয়ন মিলে) ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা—যা চলতি অর্থবছরে (২০২৩—২৪) সরকার প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি। বৈষম্য—অসমতা—দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সরকারের দেশি—বিদেশি ঋণনির্ভরতা কমাতে সুনির্দিষ্টভাবে ২৪ বর্গে ৩৪১টি সুপারিশ করা হয়েছে।

সমিতির অডিটরিয়ামে সদ্যনির্বাচিত সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং সদ্যবিদায়ী সভাপতি ও বিকল্প বাজেট উপস্থাপন সংস্কৃতির প্রবক্তা অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের উপস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম।

এ সময় সাংবাদিক ও সমিতির সদস্য ছাড়াও জুম মিটিংরুম, ফেসবুক, ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা, ৪৫টি ইউনিয়ন এবং বহির্বিশ্বের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত থেকে নানা শ্রেণিপেশার অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেটের প্রস্তাবনায় বলেছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে সরকারকে সেসব উৎসে হাত দিতে হবে, যেসব উৎসে অতীতে কখনও হাত দেওয়া হয়নি অথবা প্রয়োজনমতো হাত দেওয়া হয়নি, যার অন্যতম হলো সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, অর্থ পাচার ও কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর, বিভিন্ন কমিশন ও বোর্ড কর্তৃক আহরণ বৃদ্ধি এবং সরকারের সম্পদ আহরণের প্রচলিত বিভিন্ন উৎসে আদায়ের যৌক্তিক বৃদ্ধি। অর্থনীতি সমিতির মতে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মধ্যে এখন পরোক্ষ করের ওপর তুলনামূলক বেশি জোর দেওয়া হয়, যা মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ায়। তাই পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিতে হবে এবং দরিদ্র, নিম্ন—মধ্যবিত্ত ও মধ্য—মধ্যবিত্ত মানুষকে সামনের কয়েক বছর আয়করবেষ্টনির বাইরে রাখতে হবে। সমিতি বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জিভূত আনুমানিক ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি কালোটাকা এবং পাচারকৃত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার মধ্যে থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যথাক্রমে মাত্র ০.৯৮ শতাংশ ও ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করেছে, যেখান থেকে সরকারের আয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯২.১৩ শতাংশ। আর বাজেটের বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার (মোট ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ৫৬.১ শতাংশ), সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ গ্রহণ (মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১৪.৬ শতাংশ), এবং সরকারি—বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ২৯.৩ শতাংশ)। সমিতির প্রস্তাবে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না, যা চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটে ঘাটতি পূরণে ৩৯.৫ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট অর্থায়নে কোনো দেশি ও বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না।

জনকল্যাণকামী বিকল্প বাজেট ব্যয-বরাদ্দ

= ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি)

রাজস্ব-আয়

= ১০ লাখ ২৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ২.০৩ গুণ বেশি)

বাজেট ঘাটতি

= ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ৪.৪৬ শতাংশ কম)

====================================

অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবে মোট বরাদ্দে এবং আনুপাতিক বরাদ্দে উন্নয়ন বাজেট হবে পরিচালন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি, যা এখন ঠিক উল্টো। এখন উন্নয়ন—পরিচালন বাজেট বরাদ্দের অনুপাত ৩৮:৬২, যা অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে হবে ৬৬:৩৪। প্রস্তাবনায় উন্নয়ন বরাদ্দ চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ২.১ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হবে।

সমিতির অর্থনীতিবিদরা রাজস্ব আয়ে নতুন নতুন খাত উল্রেখ করেছেন। এরমধ্যে রযেছে কালো টাকা ও পাচারের টাকার ক্ষুদ্র একটি অংশকে উদ্ধার করে রাজস্ব আয়ে অন্তর্ভূক্ত করা, অতি মুনাফা থেকে বাধ্যতামূলক কর আদায়, বিলাসী পণ্যের কর আদায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমিতি প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার স্থায়িত্ব দেবে।

খুলনা গেজেট/কেডি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!