বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত চালিয়ে এই সহিংতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও দেশটি রেখেছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩১ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষস্থানীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আরও কী পদক্ষেপ নিতে পারে সে প্রসঙ্গটি সামনে আনেন।
ওই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে লাখো মানুষ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, শনিবার পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ এবং বিরোধী নেতাদের ওপর নির্মমভাবে হামলা চালায়, যার ফলে শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, ক্রমবর্ধমান এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ বিরোধী দলের ওপর পুলিশের বর্বরতা এবং এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্টত কট্টরপন্থি অবস্থান বিবেচনা করে সামগ্রীক বিষয়কে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কী পদক্ষেপ নেবে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা এই সপ্তাহান্তের রাজনৈতিক বিক্ষোভকে ঘিরে বাংলাদেশে ভীতি প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আমরা এসব সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে এবং সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হয়ে সমাবেশ করতে পারে এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে সকল পক্ষকে মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সম্মান করতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের মতো কাজ থেকে বিরত থাকতেও আমরা আহ্বান জানাই।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, পরিশেষে আমি বলব, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সকলের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে। এখানে ভোটার, রাজনৈতিক দল, যুব সমাজ এবং পুলিশ; সবার ওপর দায়িত্ব রয়েছে। আর রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশে এটি (অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন) হতে পারে না।
পরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিও ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল গত সপ্তাহে দেশের রাজধানীতে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা শুধু বেসামরিক সম্পত্তি নয়, পুলিশের সম্পত্তিও আক্রমণ করছে। সেখানে তারা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা রাজধানীতে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
জবাবে মিলার বলেন, আমি আগের প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করেছি।
এই পর্যায়ে ওই সাংবাদিক বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণ চাই, গত ১৫ জুন কানাডার ফেডারেল বিচারক বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিল তারা। সে বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
জবাবে মিলার বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনও পর্যবেক্ষণ নেই।
তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং ভীতি সৃষ্টির ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “সহিংসতার যে খবর এসেছে, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে বলব স্বচ্ছতার সঙ্গে, পক্ষপাত না করে এর বিস্তারিত তদন্ত করে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে।”
বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে রাজনৈতিক নানা বিষয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া প্রকাশও বাড়ছে।
গত দুটি নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পর এবার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র; যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তারা দেশটির ভিসা পাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ সহিংসতার জন্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবারই বলেছেন, বিএনপির উপর মার্কিন ভিসা নীতি ‘প্রয়োগ করা উচিৎ’।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে সরকার পতনের আন্দোলনে নামে বিএনপি শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। পাল্টা কর্মসূচিতে সেসব স্থানে আওয়ামী লীগও অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাত বাঁধে; সংঘর্ষের পাশাপাশি তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই সহিংসতার জন্য পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল দায়ী করছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি দায়ী করছে সরকারকে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল/এনএম