খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

বাংলাদেশে পান করা ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসারের জীবাণু: গবেষণা

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশিদের পান করা প্রায় অর্ধেক পানিতেই বিপজ্জনকভাবে উচ্চমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের মাত্রা বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির হলেও দেশটির মানুষ এই পানি পান করছেন। বুধবার বিজ্ঞানবিষয়ক পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা পরিচালনার জন্য সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। গবেষকরা আর্সেনিক নিঃসরণের মাত্রা বোঝার জন্য পানিতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখেছেন।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের পান করা পানির ৪৯ শতাংশের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের অনিরাপদ মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে মানুষের শরীরে আরসেনিকসিস হয়। যা থেকে ফুসফুস, মূত্রাশয়, কিডনি এবং ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।

এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সংকটের তীব্রতাকে তুলে ধরেছে।

গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রায়ই প্রবল বন্যার মুখোমুখি হয়। একই সঙ্গে জলবায়ু সংকটের ক্ষতিকর প্রভাবের সবচেয়ে ঝুঁকিতেও আছে বাংলাদেশ। দেশটিতে ইতিমধ্যে আর্সেনিকের কারণে লাখ লাখ মানুষ ত্বক, মূত্রাশয় ও ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন।

২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমের তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের প্রায় ২১ শতাংশ এলাকায় বন্যা হয়। পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পানিতে অতিরিক্ত মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতির সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও মৌসুমী ভারী বন্যার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রের নোনা পানি সুপেয় পানির সাথে মিশে যাওয়ায় পলি থেকে আর্সেনিক নির্গত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১০ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি)। কিন্তু বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ এলাকার নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ডব্লিউএইচও নির্দেশিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বলে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন।

কিছু কিছু এলাকার পানিতে আর্সেনিকের ঘনত্ব প্রতি লিটারে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।

গবেষণাটির মুখ্য গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের নরউইচ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেছেন, এই সংকট কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বাসিন্দাদেরও আর্সেনিক বিষক্রিয়া প্রভাবিত করছে।

তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির একই রাসায়নিক প্রক্রিয়া পলি থেকে আর্সেনিককে বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। পলি থেকে নির্গত আর্সেনিক বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের নলকূপের পানিতেও মিশছে।’’

ড. ফ্রিসবি বলেন, আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রভাব বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার ১১ বছর আগে উপমহাদেশে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। ভারত এবং বাংলাদেশে পানিতে আর্সেনিকের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতি কয়েক দশকের পুরোনো; যা উভয় দেশের জনসংখ্যাকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

গবেষণার এই ফলাফল জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা। গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান কিংবা আর্সেনিকের সংস্পর্শে এলে ক্যানসার এবং ভাস্কুলার রোগসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে পানি পরিশোধন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোসহ সম্ভাব্য অন্যান্য সমাধানমূলক ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!