১৯৭১ সালের নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালির প্রাণ আর ৫ লাখের বেশি নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা । তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ এখনো ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হয়নি। বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা এবং শহিদ ও নির্যতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে দেশী বিদেশী অপপ্রচার।
এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে সেই লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের উদ্যোগে খুলনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। ২০১৪ সালের ১৭ মে এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। খুলনায় স্থাপিত জাদুঘরটি বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর।
এই গণহত্যা জাদুঘরের মোট ৮ টি গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার দুর্লভ স্মারক, ছবি ও শহিদদের স্মৃতি চিহ্ন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র। রয়েছে শহিদের দেহাবশেষের নিদর্শন, প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যবহৃত দেশি অস্ত্রের গ্যালারি , দেশ বিদেশের শিল্পিদের গণহত্যা নির্যাতন নিয়ে আঁকা ৩০ টি তৈলচিত্র।
এছাড়া ইলেক্ট্রন্কি আর্কাইভে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত আলোকচিত্র। জাদুঘরটির পাশাপাপশি রয়েছে গণহত্যা-নির্যাতন গবেষণা কেন্দ্র। জাদুঘর ও আর্কাইভ এসব কিছুই পরিচালিত হচ্ছে ট্রাস্টের অধীনে ।
১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এর উপ-পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান
বাবুল খুলনা গেজেটকে জানান, “আমরা গণহত্যা-নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক অনলাইন ও অফলাইন আর্কাইভ গড়ে তোলা, গণহত্যার বিস্মৃত স্থান জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য জেলা ভিত্তিক ’৭১-এর বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্ণিত করণের কাজ করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে অ্যাডভোকেসি করছি। এসব কর্মকান্ড সম্পন্ন হলে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানবে এবং বিশ্ব দরবারে ’৭১ এর গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাবে।”
২০১৯ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪,০৯৬ জন এই গণহত্যা জাদুঘর পরিদর্শনে এসেছেন যাদের মাঝে অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। জাদুঘর এর কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য নিয়োজিত আছেন একজন কিউরেটর, দু’জন ডেপুটি কিউরেটর এবং একজন গাইড।
বর্তমানে গণহত্যা জাদুঘরটি অস্থায়ীভাবে খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ২য় ফেইজের ৬ নং রোডে অবস্থিত ৪২৪ নং বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ীভাবে জাদুঘরের জন্য খুলনার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে ৬ তলা একটি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, যেখানে লাইব্রেরি, গবেষণাগার, আর্কাইভ, অডিটরিয়াম এবং সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ একটি পরিপূর্ণ কালচারাল সেন্টার তৈরী হচ্ছে ।
খুলনা গেজেট /এমএম