বলিভিয়ায় সামরিক ‘অভ্যুত্থান চেষ্টার’ ঘটনা ঘটেছে। দেশটির রাজধানী লাপাজে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান অভিযান চালিয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার লাপাজের ঐতিহাসিক প্লাজা মুরিলো স্কয়ারে জড়ো হতে থাকে সশস্ত্র সৈন্যরা। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এছাড়া সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতে অবস্থান নেয়। এ ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বলিভিয়ার পুলিশ এ অভ্যুত্থান চেষ্টার নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদ্রোহী সামরিক অফিসার ইনচার্জ জেনারেল জুয়ান হোসে জুনিগা বলেছিলেন, যে তিনি ‘গণতন্ত্রের পুনর্গঠন’ করতে চান। তিনি এখন গ্রেপ্তার।
এদিকে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর সৈন্যরা সেখান থেকে প্রত্যাহার শুরু করেছে। নতুন সেনাপ্রধান হোসে উইলসন সানচেজ বিদ্রোহী সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া নির্দেশ দেন। তারপর থেকে মুরিলো স্কয়ার থেকে সৈন্যরা ট্যাংকগুলো সরিয়ে নেয়।
প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা দিয়ে সৈন্যদের উদ্দেশে জুয়ান হোসে জুনিগা বলেছিলেন, ‘আমরা এই জন্মভূমি পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনী দেশে গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে চায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। একটি এলিট শ্রেণি দেশ দখল করে নিয়েছে, যারা দেশকে ধ্বংস করেছে।’ কারাগারে বন্দী সাবেক নেতা জিনাইন অ্যানেজসহ অন্য ‘রাজনৈতিক বন্দীদের’ মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
এটিকে ‘অভ্যুত্থান চেষ্টা’ উল্লেখ করে এ প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতর থেকে এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি জনগণকে গণতন্ত্রের পক্ষে সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের প্রকাশ্যে সমালোচনা করার পর জেনারেল জুনিগাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মোরালেস এ অভ্যুত্থান চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে জেনারেল জুনিগা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির আইন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর একটি ফৌজদারি তদন্ত হবে।
জুয়ান হোসে জুনিগা গত সোমবার বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেস যদি আবারও ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ বক্তের পর তাকে সেনাপ্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এমন আলোচনা চলছিল। বলিভিয়ার আদিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে উঠে আসা প্রথম প্রেসিডেন্ট মোরালেস। বামপন্থী এই নেতা দেশটিতে একসময় জনপ্রিয় ছিলেন। সংবিধান পরিবর্তন করে ২০১৯ সালে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানালে তিনি বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছাড়েন। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হন অ্যানেজ। বছর খানেক পর নির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা লুইস আর্চি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি দেশে ফেরেন। সংবিধানবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য অ্যানেজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/এইচ