রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজিসহ যত ওষুধ তৈরি হয় এর অধিকাংশ ওষুধ, শাকসবজি, ফল, ফুল, ভেষজ উদ্ভিদ, খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি হয়। প্রায় সকল ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ ক্ষতিকর প্রভাব হয়। কিন্তু ফল, ফুল, শাকসবজি, ভেষজ উদ্ভিদের কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর প্রভাব নেই। তাই শরীর সুস্থ, সতেজ, রোগমুক্ত ও সুন্দর রাখার জন্য ভিটামিন ‘সি’ খুবই প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র প্রধান উৎস বর্ষাকালের ফল। ভিটামিন সি’র অভাবে অনেক জটিল রোগ হয়। এজন্য নিয়মিত পরিমাণ মতো ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেলে জটিল রোগ হবে না।
ভিটামিন সি’র প্রয়োজনীয়তা-
* ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগের উপশম ও প্রতিরোধ করে।
* দাঁত ও হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে এবং পুষ্টিসাধন করে।
* দেহে লৌহ ও ক্যালসিয়ামের বিপাকে সহায়তা করে।
* বিভিন্ন রকম ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ এবং নিরাময় করে।
* দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* দেহের ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
* পাকস্থলী সুস্থ রাখে।
* চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।
* দেহের ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
* কোষের ক্ষয়রোধ এবং গলনালি, মুখগহবর, পাকস্থলী, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষণ- ভিটামিন সি’র অভাবে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে, মাড়ি ফুলে ওঠে, গায়ে কালশিরা পড়ে, গোড়ালি ও কব্জি ফুলে ওঠে, ত্বক শক্ত ও খসখসে হয়, অ্যানিমিয়া দুর্বলতা দেখা দেয়, ক্ষত সারতে এবং ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে বিলম্ব হয়, রক্তপাত বন্ধ হয় না, রক্তের অণুচক্রিকা ও লোহিত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়, শিশুদের দেহ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ওজন হ্রাস পায় ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় মাত্রা- দৈনিক ভিটামিন সি’র প্রয়োজন প্রতি শিশু (০-১২ মাস) ২০ মিলিগ্রাম, প্রতি শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী (১-১৮ বছর বয়স) ৪০ মিলিগ্রাম, প্রতি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীলোক ৪০ মিলিগ্রাম, প্রতি গর্ভাবস্থায় ৩০০ মিলিগ্রাম, প্রতি প্রসূতি ১৫০ মিলিগ্রাম। অতিরিক্ত খেলে অসুবিধা নেই। তবে লাভ হয় না, প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়।
উৎস- ভিটামিন সি’র (অ্যাসকরবিক এসিড) এর প্রধান উৎস্য ফল ও শাকসবজি। কিন্তু ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় এবং তাপে নষ্ট হয় বলে শাকসবজি ধোয়া এবং রান্নার সময় নষ্ট হয়। তাই এর একমাত্র উৎস ফল। তবে বর্ষাকালীন ফলেই ভিটামিন সি বেশী থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আহারোপযোগী আমলকিতে ৪৬৩, জাম্বুরায় (লাল) ১০৫, পেয়ারায় ২১০, লেবুতে ৬৩, জামে ৬০, কামরাঙ্গায় ৬১, আমডায় ৯২, জলপাইয়ে ৩৯, পেঁপেতে (পাকা) ৫৭, আমে (পাকা) ৪১, আনারসে ২৬, বরইয়ে ৫১, লিচুতে ৩১, কমলাতে ৪০, মাল্টায় ৮৪, কাঁচামরিচে ১২৫ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া সব ফলেই কম-বেশি ভিটামিন সি থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক প্রতিদিন তিন-চারটি আমলকি বা মাঝারি আমলকি বা মাঝারি আকারের একটি পেয়ারা বা বড় আকারের দুটি আমড়া বা বড় একটি কামরাঙ্গা খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন সি’র অভাব পূরণ হবে। গাছ থেকে ফল ও শাকসবজি সংগ্রহের পর থেকেই গরমে ভিটামিন সি নষ্ট হতে থাকে। এজন্য ফল এবং সবজি যতটা সম্ভব টাটকা খাওয়া উচিত। তাই ভিটামিন সি’র উৎস হিসেবে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ টক জাতীয় ফল খাওয়া ভাল। ফলের রস না করে আঁশসহ সরাসরি খাওয়া ভাল। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- নিজের যত্ন না নিলে নিজে অন্যের ওপর ভরসা মিছে।
খুলনা গেজেট/এনএম