খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বরেণ্য বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ওরফে পিসি রায় ১৫৯তম জন্মদিন রবিবার (২ আগস্ট)। করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে দিবসটি এবার নেই বর্ণাঢ্য আয়োজন। তবে গুণীজন স্মৃতি পরিষদ খুলনার উদ্যোগে আজ বেলা ১১টায় বিএমএ ভবনে বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর বিজ্ঞানীর জন্মস্থান খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়লীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হতো।

বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরের রাড়লী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী এবং বাবা হরিশ চন্দ্র রায়। যিনি স্থানীয় প্রসিদ্ধ জমিদার ছিলেন। ছেলেবেলা থেকে পিসি রায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তার পড়াশোনা শুরু হয় তারই পিতার প্রতিষ্ঠিত ‘এমই’ নামে স্কুলে।

১৮৭২ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু রক্ত আমাশয়ের কারণে তার পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটে। বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে থাকার সময় তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। তিনি বাড়ির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত নানা বিষয়ে প্রচুর বই পড়েন। এসময় কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন অলেকজেন্ডার পেডলার।

খ্যাতিমান এ অধ্যাপকের সান্নিধ্যে এসে রসায়নের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। কলেজের পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন পাঠাগার থেকে রসায়নের বই সংগ্রহ করে পড়তেন তিনি। নিজের চেষ্টায় বাড়িতে পরীক্ষাগার স্থাপন করে রসায়ন সস্পর্কে নানারকম পরীক্ষাও চালাতেন। তিনি গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে থেকে তিনি বিএসসি এবং ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন।

তিনি শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্রের জন্য ‘হোপ প্রাইজ’ লাভ করেন। ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল রায় দেশে ফিরে আসেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।

১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং আরও বেশ কিছু বিষয় আবিষ্কার করে বিস্ময় সৃষ্টি করেন।

১৯০৩ সালে চারটি গ্রামের নাম মিলে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর কে বি কে হরিশচন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। একই স্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভুবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়লী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের সাহায্য করেন।

এছাড়া, তিনি ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালে কলকাতায় তিনিই প্রথমবারের মতো মহাত্মা গান্ধীর জনসভা আয়োজন করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও নাইট উপাধিতেও ভূষিত হন।

১৯৪৪ সালে ১৬ জুন জীবনাবসান ঘটে চিরকুমার বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের। মৃত্যুর আগে এ বিজ্ঞানী তার জীবনে অর্জিত সব সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!