অবশেষে তিন মাস পর আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। দেশের তিনটি বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরীক্ষা নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র সচিবদের সাথে পরীক্ষা সংক্রান্ত মতবিনিময় ও সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারম্যান ডক্টর আহসান হাবীব। এরআগে গত ১৯ জুন সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবার তারিখ নির্ধারিত ছিল। এবারের পরীক্ষা একঘন্টা কমিয়ে দু’ঘন্টা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরু হবে সকাল ১০টার পরিবর্তে ১১টায়। একইসাথে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্রে জানা যায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় ১১ হাজার ৩১০ জন কম। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৭ পরীক্ষার্থী। করোনা মহামারি ও বাল্যবিয়ের কারণে এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, অন্যান্য বছরে সাধারণত জানুয়ারি মাসেই সারাদেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে পরীক্ষার সিডিউলের বিপর্যয় ঘটে। চলতি বছরে বিলম্বিত সময় কিছুটা পুষিয়ে নিতে গত ১৯ জুন এসএসসি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এসময়ে সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বর্তমানে বন্যা ও করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকায় মন্ত্রণালয় আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবারের পরীক্ষায় কয়েকটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তিন ঘন্টার পরীক্ষার সময় কমিয়ে দুই ঘন্টা করা হয়েছে। সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রের নিদির্ষ্ট কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২০ মিনিট সৃজনশীল (এমসিকিউ) ও রচনামূলক (লিখিত) পরীক্ষার সময় ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষাথীরা কেন্দ্রে নন-প্রোগ্রামাবল সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং জাতীয় কোন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বহন এবং ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স কোন ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। ১৫ সেপ্টেস্বর বৃহস্পতিবার শুরুর দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর শনিবার উচ্চতর গণিত (তত্ত¡ীয়) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারের এসএসসির লিখিত পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটবে। এরপর ১০ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর গোলাম রব্বানী জানান, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৮৫ হাজার ৫৯৯ জন ও ছাত্রী ৮৪ হাজার ৭৭৮ জন। মোট ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে সর্বোচ্চ যশোরে ৫২টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৮ হাজার ৫২ পরীক্ষার্থী। খুলনায় ৫৮টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৬ হাজার ৮জন পরীক্ষার্থী। বাগেরহাটের ২৭ কেন্দ্রে ১৪ হাজার ২৮৭ জন, সাতক্ষীরার ২৭ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৭০ জন, কুষ্টিয়ার ৩১ কেন্দ্রে ২৪ হাজার ১৫৩ জন, চুয়াডাঙ্গার ১৮ কেন্দ্রে ১১ হাজার ১২২ জন, মেহেরপুরের ১৩ কেন্দ্রে ৭ হাজার ৭২৪ জন, নড়াইলের ১৪ কেন্দ্রে ৮ হাজার ১৯৩ জন, ঝিনাইদহের ৩৬ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯০৩ জন, মাগুরার ১৭ কেন্দ্রে ১১ হাজার ৮৬৫ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে।
ইতিমধ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নতুন তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় সর্বশেষ বোর্ড কর্তৃপক্ষ গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের দশ জেলার ২৯৩টি কেন্দ্রের সচিবদের নিয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত মতবিনিময় ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব এদিন বিভাগের যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, মাগুরা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ জেলার কেন্দ্র সচিবদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, ২০২২ সালে যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ওই সময় দেশে করোনা মহামারির কারণে তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বাল্যবিয়ে হয়েছে ও অনেকে ঝরে গেছে। এসব কারনে এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে।
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব বলেন, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে সুন্দর পরিবেশেই এবারের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই