সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি জানান, সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/দিঘি/খামারের সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজার ৮৯৯। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ ও চিংড়ির পরিমাণ ৯০ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন। অবকাঠামোগতসহ মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৫৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
রবিবার সচিবালয়ে ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও করণীয় নিয়ে আলাপকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় জান-মালের ক্ষতিসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এর ফলে অনেক গবাদি পশুর মৃত্যু, ভেসে যাওয়াসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য এবং অন্যান্য পশুখাদ্য নষ্ট হয়েছে। এই খাতে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দুধ, ডিমসহ প্রায় ৪১১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেন তিনি।
সেগুলো হলো : জরুরি পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ; গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান; ঘাসের কাটিং বিতরণ করা। একইভাবে মৎস্য খাতেও চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা, যেমন—সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নয়ন, মৎস্য চাষিদের জন্য বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো, মৎস্য খামারগুলোকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করা। এ ছাড়া মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত কার্যক্রমের অব্যয়িত অর্থ ব্যয়ে বন্যাকবলিত এলাকার চাষিদের মধ্যে পোনা বিতরণ করা যেতে পারে বলে জানানো হয়।