ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ১০ জেলার মানুষ বন্যাকবলিত। জেলাগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব জেলার এক হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জেই ৫৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বন্যার কারণে হাজারো মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল। কিছু এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ সব নদ-নদীর পানি আরও বেড়েছে। এতে জেলার ২৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪০টিতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা এবং জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে ১৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৭টিতে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। দুটি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এসবের মধ্যে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ৭১টি এবং মাদ্রাসা ৩২টি। চিলমারী ও রাজিবপুরে তিনটি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া রৌমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ছয়টি কলেজে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
চিলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধটি কয়েক মিটার দেবে গেছে। সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে হুমকির মুখে রয়েছে ডান তীর রক্ষা প্রকল্পটি।
গাইবান্ধায় ৮০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ
গাইবান্ধার ৪টি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। নদীতীরবর্তী ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। অনেক টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে নৌকায় করে ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। জমিতে পানি আটকে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় পাঠদান বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যাকবলিত চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ১৬৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব বিতরণ শুরু হয়েছে। পানিবন্দীদের উদ্ধারের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
টাঙ্গাইলে বিপৎসীমার ওপর যমুনার পানি
টাঙ্গাইলে যমুনাসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে লোকালয়ের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাই নদের পানি কালিহাতীর জোকারচর পয়েন্টে ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর ও কালিহাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। আর ভাঙনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আরও অনেকের বসতভিটা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটের নদ-নদীতে আরও কমছে পানি। এতে জেলার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি আরও নেমে যাচ্ছে।
গতকাল দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১০১টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮০টি গ্রামের ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৯ হাজার ৩২৯ জন।
পাউবোর তথ্যমতে, সিলেটের কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্ট ও সুরমার একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কুশিয়ারার পানি লোকালয়ে ঢুকে ভেসে গেছে বিপুলসংখ্যক পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জকিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জকিগঞ্জ-সিলেট ও শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের একটি অংশ।
জকিগঞ্জের ইউএনও আফসানা তাসলিম বলেন, নদ-নদীর পানি কিছুটা কমায় জকিগঞ্জে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। লোকালয় থেকে পানি নামছে।