খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত
  শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২

‘বন্যাকে আপন করে, তার সঙ্গে বসবাসের পদ্ধতি শিখতে হবে’

গেজেট ডেস্ক

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা এবং পানিসম্পদ বাঁচাতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে উপরিভাগের পানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বন্যাকে আপন করে তার সঙ্গে বসবাসের পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পানির অপচয় কমানোর আহ্বান রেখে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও জলাধারের ব্যবস্থা রেখে আগামীতে সব নির্মাণ পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

বিশ্ব পানি দিবসে সোমবার(৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর গ্রিন রোডের পানি ভবনে আয়োজিত আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানির অপর নাম জীবন। কাজেই পানিসম্পদকে রক্ষা করা, এটা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। আর ভূগর্ভস্থ পানি যত কম ব্যবহার করা যায়, আর ভূউপরিস্থ পানি যত বেশি ব্যবহার করা যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমস্ত পরিকল্পনা আমরা নিজেরা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন যখন করা হবে, এ বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পৃথিবীতে ৩৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে রয়েছে। মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত ২৩০ কোটি মানুষ। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া একান্ত কষ্টকর, কিন্তু আমাদের বিশাল পানিসম্পদ রয়েছে।’

‘আমাদের এই সম্পদ যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের মানুষের এ কষ্ট কোনো দিন হবে না; বরং আমরা বিশ্বকে পানি সরবরাহ করতে পারব। আমাদের সেই বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।’

‘বন্যাকে আপন করে নিতে হবে’

বাংলাদেশ বদ্বীপ হওয়ার কারণে বন্যাকে আপন করে, তার সঙ্গে বসবাসের পদ্ধতি শিখে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বন্যার সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে। বন্যাকে আমাদের আপন করে নিতে হবে। বন্যার সঙ্গে বসবাস করার পদ্ধতি আমাদের শিখতে হবে। কারণ যেহেতু বাংলাদেশে বদ্বীপ।’

বন্যায় নদী ভাঙনসহ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার জন্য আমরা ড্রেজিংয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ড্রেজিং শুধু নদীর নাব্যতা বাড়াবে না, নদীর নাব্যতা যেমন বাড়াবে, আমাদের নৌপথগুলো সচল হবে। আমরা স্বল্পমূল্যে আমাদের পণ্য পরিবহন করতে পারব।’

দেশের নদ-নদীগুলো দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়াতে তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে, নদীর বিশালতা বেড়ে গেছে, নদী অনেক চওড়া হয়ে গেছে। এত চওড়া নদী আমাদের প্রয়োজন নেই। এখানে বিভিন্ন পকেট তৈরি করে, নদীর ড্রেজিং করে, ড্রেজিং করা পলি সেখানে ফেলে আমরা কিন্তু ভূমি উত্তোলন করতে পারি।’

নদী রক্ষায় বাঁধ নির্মাণও ড্রেজিং থেকে পাওয়া পলি দিয়ে করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের চাষ উপযোগী জমি কখনও যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ড্রেজিং করা পলি যেন চাষ উপযোগী জমিতে না পড়ে, তার জন্য আলাদা পকেট নদীতেই করা যাবে। কারণ বিশাল চওড়া নদী আমাদের সব জায়গায় প্রয়োজন নেই।’

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘অভিঘাত সহিষ্ণু উন্নয়ন দর্শন’ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এ উন্নয়ন দর্শনে আমরা নেচার বেইজড সল্যুউশনসের ওপর জোর দিয়েছি। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সম্ভ্যাব্য ক্ষেত্রগুলোতে প্রকৃতি নির্ভর ব্যবস্থাপনা কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।’

কমাতে হবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার

ভূগর্ভস্থ পানির ওপরে এখনও যথেষ্ট নির্ভরশীলতা রয়েছে বলে জানান প্রধামন্ত্রী। আর তা কমিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা কিন্তু নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা শুরু করেছি। ঠিক সেভাবে জেলা-উপজেলায় সুপেয় পানির পাইপের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেটাও কিন্তু আমরা নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে দিচ্ছি। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করবার বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে আমরা হাতে নিয়েছি।’

এমনকি সেচ কাজেও ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বর্ষাকালের পানি এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমে যাবে। আর বাংলাদেশের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির বেশি ব্যবহার করার ক্ষতি এ জন্য যে, বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ একটি জায়গা। এই পানি কিন্তু আমাদের রক্ষা করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের নিচে বিশাল শিলা আছে। তার নিচে আরও বিশাল পানির স্তর আছে এবং এটাই কিন্তু আমাদের রক্ষা করছে। সেখানে যদি আমরা বেশি পানি ব্যবহার করে ফেলি ভূগর্ভস্থ, তাহলে কিন্তু ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কাও বেশি দেখা দেবে। সেদিকে মাথায় রেখে আমাদের সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ওই সময় বর্ষা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং জলাধার নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ বা বাসস্থান নির্মাণ বা যেটাই আমরা নির্মাণ করি না কেন, সব ক্ষেত্রে আমাদের দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। একটা হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা, আরেকটা হচ্ছে জলাধার থাকা।

‘জলাধার থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন, সেখানেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ হয়। তা ছাড়া বৃষ্টির পানি ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, এদিকে আমাদের আরও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে এবং সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে।’

কমাতে হবে অপচয়

দেশের জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকার বাসাবাড়িতে পরিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো করতে কিন্তু অনেক খরচ হয়। পানির অপচয়টা বন্ধ করতে হবে। সেটা নির্মাণকাজে হোক, গৃহস্থালি কাজে হোক বা সেই গাড়ি ধোয়ার কাজে হোক বা যে কাজেই হোকে, লন্ড্রি ব্যবহার হোক, সব ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এই পানিসম্পদ অপচয় করলে, কোনো সম্পদ থাকে না শেষ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ‘এই যে আমাদের অমূল্য সম্পদ রয়েছে, সেই সম্পদ আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারি বা ভবিষ্যত বংশধররা ব্যবহার করতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ

জলাবদ্ধতা সংকট দূর করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যখনই যেকোনো নির্মাণ হবে বা আমাদের কোনো প্ল্যান প্রোগ্রাম নেয়া হবে, প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে এটা মাথায় রাখতে হবে, বন্যার সময় আমাদের যে পানি বহমান থাকে, সেটা যেন বহতা থাকে। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে পানি যেন কোথাও বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে দেখতে হবে।’

রাস্তা-সড়ক নির্মাণের সময়ও যাতে পানির প্রবাহ যেন ঠিক থাকে, সেভাবে পরিকল্পনা করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘হাওর-বাঁওড় এলাকায় রাস্তা হলে সেগুলো যেন মাটি ভরাট করে না করা হয়, সেটা পিলার দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা, যেন পানির প্রবাহ বা গতিটা বাধাগ্রস্ত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যেখানে-সেখানে যত্রতত্র নির্মাণ বা বাঁধের উচ্চতা…আমি জানি হয়তো একটু উঁচু হলেই বেশি পয়সা খরচ হয়। বেশি পয়সা খরচ হলে কিছু লোক কমিশন পাবে, এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। দেশের জন্য কল্যাণকর যেটা, সেভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।’

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!