বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের চক্রাখালি এলাকায় গৃহবধূ ঝুমুর রায়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে ঘাতক স্বামী দেব কুমার রায় ও তার প্রেমিকাসহ স্বজনরা। এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে প্রতিবেশীরা।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজ শিক্ষক সুজিত কুমার রায়। নিহত ঝুমুর রায় রাজবাঁধ এলাকার দিনমজুর রিপন রায়ের কণ্যা।
এঘটনায় আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতে পিতা রিপন রায়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা হল- বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের মল্লিকের মোড় এলাকার দেব কুমার রায় (৪৫), তার বড়দা বিধান রায় (৫৫), বিধান রায়ের পুত্র প্রান্ত রায় (২৫), দেব কুমার রায়ের বোন (অবিবাহিত) পারুল রায় (৪৭), বিধান রায়ের স্ত্রী বিউটি রায় (৪২), দেব কুমার রায়ের পরকিয়া প্রেমিকা দীপিকা রায় (৩০) ও দেব কুমারদের বাড়ীর লজিংমাস্টার শংকর রায় (৪৪)।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- ঝুমুর রায় (২৫) কে সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী প্রায় একযুগ আগে পারিবারিক আয়োজনে জলমার চক্রাখালির দেব কুমার রায়ের বিয়ে হয়। তাদের পৃথা রায় (৫) নামে একটি মেয়ে রয়েছে। মূলত মেয়ের জন্মের পর থেকে দেব কুমার রায় মামলার অন্য আসামীদের প্ররোচনায় ঝুমুর রায়কে মানসিক ও শারিরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। হত দরিদ্র বাবার সন্তান হওয়ায় শ^শুর বাড়ির লোকজন ঝুমুর রায়ের সাথে ভৃত্যেও মতো ব্যবহার করতো। এ নিয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা একাধিক বার শালিস করলেও কোন ফল হয়নি। এরমধ্যে স্বামী দেব কুমার রায় পাশর্^বর্তী দীপিকা রায়ের সাথে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি ঝুমুর জেনে যাওয়ায় তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে ঝুমুর রাজবাঁধ তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর তাঁর শ^শুর বাড়ির লোকজন ঝুমুরকে পুনরায় ঘর সংসার করার কথা নিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ৩০ অক্টোবর ঝুমুর রাত পৌনে ৮টার দিকে দেব কুমার রায়ের ব্যবহৃত নম্বর ব্যবহার করে বাবার বাড়িতে ফোন দেন। ঝুমুর তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানায়। ৩১ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত মল্লিক দেবু জানান, ঝুমুর রায় আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ঝুমুর আত্মহত্যা নয়, বরং হত্যা তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর খুমেক হাসপাতালে সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতে মামলা (যার নং সিআর ২৫৩/২২) দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ এমামলার আসামীদের এখনো গ্রেপ্তার করেনি। তারা অবিলম্বে ঝুমুর কুমার রায় হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মায়ের কোলে তার কণ্যা পৃথা রায়, পিতা রিপন রায় ও স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত মল্লিকসহ শতাধিক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এটি আত্মহত্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও এবিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে অবশ্যই কেউ জড়িতে থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি