ফিলিপাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে কিশোরী মায়ের সংখ্যা। ১২-১৪ বছর বয়সেই মা হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকা।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে অপর্যাপ্ত যৌন শিক্ষা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিশোরীদের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণকে ইতোমধ্যে ‘ন্যাশনাল সোশাল ইমার্জেন্সি’ (জাতীয় জরুরি অবস্থা) ঘোষণা করেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটির সরকার।
১২ বছর বয়সেও গ্রামের আরও অনেকের মতোই খেলাধুলা করতেই বেশি পছন্দ করত জোয়ান গার্সিয়া। সাগরের পানিতে লাফ দিত। ছেলেদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। কিন্তু এভাবেই পরের বছরই অর্থাৎ ১৩ বছর বয়সে অনভিপ্রেত যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে।
কিন্তু এর পরিণতি কি তখন কিছুই জানত না। আগের মতোই খেলাধুলা করেই কাটছিল তার সময়। কিন্তু হঠাৎ করেই তার পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করে। পেট বাড়তে থাকে, নজরে পড়ে সবার। গার্সিয়া তখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আরও কয়েক সপ্তাহ পর এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় গার্সিয়া।
মাত্র ১৪ বছরের কিশোরীটির যখন স্কুল আর পড়াশোনা নিয়ে থাকার কথা তখন সে সন্তান সামলাতে ব্যস্ত। শুধু গার্সিয়া নয়, ফিলিপাইনে এমন হাজার হাজার কিশোরী একই পরিস্থিতির শিকার। মূলত গত দুই দশক ধরেই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়েই চলেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত মতে, ২০০২ সালে দেশটিতে অনভিপ্রেত গর্ভধারণের সংখ্যা ছিল ৬.৩ শতাংশ। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ১৩.৬ তথা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ ফিলিপিনো কিশোরী (১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী) এক বা একাধিক সন্তানের মা হয়ে যাচ্ছে। এর মানে প্রতি ঘণ্টায় ২৪ শিশুর জন্ম হচ্ছে। করোনা মহামারীর মধ্যে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ব্যাপারে রাজধানী ম্যানিলাভিত্তিক বয়োসন্ধিকাল ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিখানের প্রকল্প সমন্বয়ক হোপ বাসিয়াও আবেলা বলেন, করোনা প্রতিরোধে ম্যানিলায় কঠোর লকডাউনের ফলে পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করেছে।
তার মতে, সীমিত মেডিকেল বা স্বাস্থ্য সুবিধা, গণপরিবহনের অভাব, ঘরে থাকার মতো কঠোর বিধিনিষেধ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতাও এর জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের প্রধান কারণ হচ্ছে অপর্যাপ্ত যৌনশিক্ষা। যেমন বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকাই যৌন সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে জানে না।
কিংবা সন্তান জন্মদানের দায়বদ্ধতা সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই। এর ফলে শিগগিরই জন্মহারে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপাইনের পপুলেশন ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, করোনা মহামারীর কারণে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ফিলিপাইনে ‘বেবি বুম’ ঘটবে। সূত্র: যুগান্তর।