হয়তো অনেকে পাগল বলবেন।বলতেই পারেন। তবুও বলব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের স্হপতি বা সেদেশের জাতির পিতা নন, সমগ্র বিশ্বের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধের প্রতীক। আমাদের রামমোহন আছেন, যিনি নবজাগরণের অগ্রদূত ও সমাজ সংস্কারক ও বাংলা গদ্যের প্রাথমিক ভিত্তি। আমাদের বিদ্যাসাগর রয়েছেন, যিনি আমাদের বাংলা বর্ণমালা দান করেছেন এবং তিনি বাংলা গদ্যের প্রকৃত জনক ও একজন পূর্ণ মানের সমাজ সংস্কারক।
আমাদের রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন, যিনি বিশ্বের বুক থেকে নোবেল ছিনিয়ে এনেছেন শুধু নয়, তিনি আমাদের কাছে বাংলা শব্দভাণ্ডার ও বাংলা ভাষাভাণ্ডার। আমাদের নজরুল রয়েছেন, যিনি আমাদের বাংলা ভাষায় বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছেন। যিনি একজন সুরসাধক ও সুরভাণ্ডার। তারপরও বলব এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামেরই মাধ্যমে ভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। পৃথিবীর বুকে বাঙালি জাতিকে আজ চেনাচ্ছে যে দেশটি তার নাম বাংলাদেশ।
তাই কবি-সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের সেই কবিতার লাইন “যতদিন রবে পদ্মা গঙ্গা গৌরী যমুনা বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার মুজিবুর রহমান”, তা যথার্থই। এ কে ফজলুল হক, কিরণশঙ্কর রায় , শরৎচন্দ্র বসু, আবুল হাসিম ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যে স্বাধীন বঙ্গপ্রদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেন তা ভেস্তে দেয় কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা।
বাংলাভাগ, দেশভাগ, তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ যে সব সমস্যার সমাধান নয় তা ভাষা স্বাধিকারের প্রশ্নে পাকিস্তানের অন্যতম অঙ্গরাজ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সেই সঙ্কট দেখা দিল। আর সেই খণ্ডিত পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা নিয়ে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু পরিণত করলেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙ্গে দেওয়া, শিক্ষা আন্দোলন, ভাষানীর ১৩ দফা, পরে তা ভেঙে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, গণ অভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও তাকে ক্ষমতায়ন যেতে না দেওয়া, বাঙালি আবেগকে আরো আন্দোলনমুখী ও মুক্তিসংগ্রামী করেছিল।
পূর্বপাকিস্তানের বাঙালিদের মুক্তিকামী করেছিল। তাই ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে যখন বলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম- – – -” , তখন প্রতিটি বাঙালির শরীর রোমাঞ্চিত হয়। মনে রাখতে সবে যে, বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক কারিগর শেরে বাংলা এক ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাসিমরা। ভাষা আন্দোলন একটা ভিত। প্রাথমিক কারিগর উক্ত চার নেতা। আর মুক্তিযুদ্ধ যার নেতৃত্বে এক সর্বব্যাপক রূপ নেয়া তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ মানে এক নিরন্তর সংগ্রামের নাম। আর একে খুব তাড়াতাড়ি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন ভারতের সর্বকালের সেরা নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তবুও বলব, যার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ হয়েছিল সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতি সত্তার এক অবিসংবাদিত নেতা। তখনকার পূর্বঙ্গের সাড়ে সাতকোটি বাঙালিকেই তিনি ঐক্যবদ্ধ করেননি, সারা বিশ্বের বাঙালি ও মুক্তিকামী মানুষের সহানুভূতি কাড়েন। তাই বঙ্গবন্ধু মানে বিশ্বের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়বোধের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব বাঙালির বিশ্ববন্ধু।