খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ফেব্রুয়ারিতেও পাঠ্যবই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

গেজেট ডেস্ক

মধ্য ফেব্রুয়ারি শেষ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সব শিক্ষার্থীর হাতে এখনো পৌঁছায়নি সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই। এখন পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে ৬০ শতাংশ বই। বাকি ১০ শতাংশ বই বাঁধাইয়ের অভাবে পড়ে আছে প্রেসে। সে হিসেবে এখনো ছাপার বাকি ৩০ শতাংশ বই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও সরকারি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বই ছাপানো ও সরবরাহের এই তথ্য জানিয়েছেন।

এমন অবস্থায় বিনামূল্যের সব বই না পাওয়া শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে বাকি বইগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়ালেখা করতে হচ্ছে। এতে ডাউনলোডের বই ফটোকপি করতে পড়ালেখার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

তাই শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছাতে কমপক্ষে মধ্য মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। তবে কাগজ ঘাটতি দেখা দিলে মার্চের শেষ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলেও তাদের ধারণা। অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান এ মাসের মধ্যেই সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২৮ কোটির মতো বই ছাপা হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৪ কোটি বই চলে গেছে। বাকি চার কোটি বই বাঁধাইয়ের অপেক্ষায় আছে। অবশিষ্ট ১২ কোটি বই আগামী ১০ দিনের মধ্যেই ছাপা হয়ে যাবে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই সবাই সব বই পাবে।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানোর জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কাগজ সংকটের সমাধান করেছি। ব্যাংকের ও বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। সেগুলো সমাধান করেছি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাঁধাইকারী সংগ্রহ করে দিয়েছি।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কিন্তু কোনো বছরই মার্চের আগে কেউ বই দিতে পারেনি। গত বছর পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বই ছিল খারাপ কাগজের। এবার ৮০ শতাংশের বেশি ভালো কাগজের বই।

বই লাগবে ৪০ কোটি :

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য জন্য ছাপা হচ্ছে প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই।

ছাপা হয়েছে ২৮ কোটি :

সরকারি বই ছাপার সঙ্গে জড়িত প্রকাশকদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের ২০ কোটির কিছু বেশি ও প্রাথমিকের ৮ কোটির কিছু বেশি বই ছাপা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ছাপা হয়েছে ২৮ কোটির মতো বই। অর্থাৎ এখনো ১২ কোটির মত বই ছাপার বাকি আছে, যা মোট বইয়ের ৩০ শতাংশ।

প্রকাশকরা জানান, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও দশম শ্রেণির বই প্রায় সবই চলে গেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ৮০ শতাংশের বেশি চলে গেছে। এখনো বাকি আেেছ এক কোটি বই ছাপানো। পিছিয়ে রয়েছে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই। এর মধ্যে বেশি পিছিয়ে আছে নবম শ্রেণির বই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক বলেন, ‘এনসিটিবি চেয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেন সব বই দেওয়া যায়, যাতে ছাত্রদের পড়ালেখাটা শুরু করা যায়। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। কারণ এনসিটিবি চেয়ারম্যান একজন আমদানিকারককে কাগজ দিতে বলেছিলেন। সেই আমদানিকারক বলছেন তিন কিস্তিতে কাগজ দেবেন। প্রথম কিস্তি দেবেন ২২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন দিলে আমরা ১৫ ফেব্রুয়ারি কীভাবে বই দেব?’

ছাপার দেরির কারণ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক বলেন, ‘বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বাদে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব বই ছাপার দেরি হওয়ার কারণ হলো এনসিটিবি বলেছিল, এগুলো বন্ধ রেখে দশম শ্রেণির বই দিতে। অন্য শ্রেণির শুধু বাংলা ও ইংরেজি বই ছাপতে। সে অনুযায়ী আমরা দশম শ্রেণির সব বই ছাপিয়েছি ও ৯০ শতাংশের বেশি বই চলে গেছে। ফলে প্রাথমিকের কিছু বই ছাপানো পিছিয়েছে। এখন সেগুলো আবার ছাপানো শুরু হয়েছে।’

প্রকাশকরা জানিয়েছেন, আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তত্ত্বাবধানে সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম হতো। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবির অভিজ্ঞ লোকজন থাকতেন। এই টিম প্রতি সপ্তাহে একদিন বসে অগ্রগতি পর্যালোচনা করত। সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি বের করত। সেটা কয়েক বছর ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো বন্ধ।

প্রকাশকরা আরও জানান, তারা বলেছিলেন যে বইগুলোর পরিবর্তন নেই, সেগুলো আগে ছাপাতে। কিন্তু কর্র্তৃপক্ষ শোনেনি। এবার বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক বই প্রথমে ছাপতে গিয়ে কাজের ধারাবাহিকতা ও কৌশলগত নিয়ম নষ্ট হয়েছে। সব মিলে ছাপানোর কাজ পিছিয়েছে।

বাঁধাই না হওয়ায় পড়ে আছে ৪ কোটি বই : প্রকাশকরা জানিয়েছেন, প্রেসগুলোয় বাঁধাই কর্মীদের তীব্র সংকট চলছে। নোট-গাইডের ওখানে পয়সা বেশি পাওয়ায় বাঁধাই কর্মীরা ওখানে চলে গেছেন। বাঁধাই কর্মীদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। প্রত্যেক প্রেসে ছাপা বই পড়ে আছে। বাঁধাইয়ে সমস্যা হচ্ছে।

প্রকাশকদের তথ্য অনুযায়ী, ছাপা হয়েছে কিন্তু বাঁধাই না হওয়ায় প্রাথমিকের প্রায় এক কোটি ও মাধ্যমিকের প্রায় তিন কোটির মতো বই পড়ে আছে। সেগুলো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বাকি বই ছাপতে আরও এক মাস লাগবে 

প্রকাশকরা জানিয়েছেন, সবগুলো প্রেস মিলে এখনো দৈনিক ৫০ লাখ বই ছাপানো সম্ভব হয়নি। সেটা হলেও বাকি বই ছাপতে আরও ২৪-২৬ দিন লাগবে। এখন পর্যন্ত দিনে ৩৭-৪৫ লাখ বই ছাাপানোর রেকর্ড আছে। সে হিসেবে সব বই ছাপা হতে কমপক্ষে ৩০ দিন তো লাগবেই। এখন যেভাবে কাগজের সরবরাহ আছে, সেটি অব্যাহত থাকলেও সব বই ছাপতে মধ্য মার্চ লেগে যাবে।

মাধ্যমিকের বই গেছে ১৭ কোটির মতো : মাধ্যমিকের বই ছাপা তদারকি করেন, এমন একজন প্রকাশক দেশ রূপান্তরকে জানান, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির ২০ কোটি ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ মতো বই ছাপা হয়েছে। সরবরাহ হয়েছে ১৭ কোটির মতো। এর মধ্যে দশম শ্রেণির প্রায় সব বই ছাপা ও সরবরাহ হয়েছে। লাগবে ছয় কোটির মতো বই। ইতিমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে ৫ কোটি ৭০ লাখ বই।

ষষ্ঠ শ্রেণির বই লাগবে ৭ কোটি ৩৪ লাখের মতো। ছাপা হয়ে চলে গেছে ৫ কোটি ২০ লাখের মতো। ছাপার বাকি আছে সোয়া দুই কোটি বই।

নবম শ্রেণির ছয় কোটি বই লাগবে। এর মধ্যে আড়াই কোটি বা ৪২ শতাংশ চলে গেছে। বাকি আছে ৩ কোটি ৫০ লাখ।

অষ্টম শ্রেণির বই লাগবে ৪ কোটি ৮০ লাখের মতো। চলে গেছে ২ কোটি ৮২ লাখ বা ৫৯ শতাংশ বই। ছাপার বাকি আছে প্রায় দুই কোটি বই।

সপ্তম শ্রেণির বই লাগবে পাঁচ কোটির মতো। এর মধ্যে চলে গেছে সাড়ে ৩ কোটির মতো ও ছাপার বাকি দেড় কোটির মতো।

এই প্রকাশক বলেন, মাধ্যমিকের প্রয়োজনীয় সব বই চলে গেছে। ঐচ্ছিক বিষয়ের কিছু বই বাকি আছে ছাপানো। সেগুলো পরে যাবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!