নগরীর খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়ীগেট জনতা মার্কেটের একাংশে চরম ঝুকিপুর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা জেনেও ব্যবসা করছে মার্কেটের প্রায় অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী।
পুরাতন জরাজীর্ণ মার্কেটটি মরার উপর খাড়ার খাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে রনি লাইট হাউজ এন্ড সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চ মাত্রার সাউন্ডের কম্পন। উচ্চ শব্দে প্রায়ইশ মার্কেটের বিভিন্ন অংশের সিলিং এর পলেস্তার এবং ছাঁদের ঢালাই খোয়া খসে খসে পড়ছে।
৩০ জুন মার্কেটের সেলুনে স্থানীয় এক সাংবাদিক চুল কাটাতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বক্রোর সাউন্ডের কম্পনে সিলিং এর কিছু পলেস্তার এবং ঢালাই খোয়া খসে পড়ে মোটরসাইকেলের উপর।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, সাউন্ড বক্সের উচ্চ শব্দের কম্পনে প্রায় এমন ঘটনা ঘটে থাকে। মার্কেটটি পুরাতন জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুকিপুর্ণ মার্কেটে ব্যবসা করা বিপদজনক জেনেও জীবনের ঝুকি নিয়ে ভাড়া কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছে।
শুক্রবার (৩০ জুন) বেলা ৩টায় ওই মার্কেটের সুদিপ্তের সেলুনে চুল কাটাতে গিয়ে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান স্থানীয় সাংবাদিক এম শফিক। এ সময় তিনি রক্ষা পেলেও তার ব্যবহৃত মোটরবাইকেলটি উপর ছিলিংয়ের ঢালাই খসে পড়ায় গাড়ীটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ভুক্তভোগী শফিক খুলনা গেজেটকে বলেন , মার্কেটের রনি সাউন্ড সিস্টেমের বক্সের সাউন্ডের কম্পনে দোকানের সামনে ছিলিংয়ের ঢালাই খসে পড়ে। দোকানের অন্যরা দ্রুত এগিয়ে গেলেও তিনি বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত না হয়ে আরও উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজাতে থাকে। এ সময় তাকে সাউন্ড বক্রা বন্ধ করতে বললে রনি সাউন্ড সিস্টেমের রানা বলেন, মার্কেটে আমি ৪টি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি আমার বক্স বন্ধ হবে না। এটা পার্কিং এর জায়গা না। এখানে মোটরসাইকেল রাখলে ক্ষতি হবে তাতে আমার কিছু করার নেই।
বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে মার্কেটের মালিক শেখ সোয়েব আলীকে অবহিত করা হলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে বলেন, মার্কেট ঝুকিপুর্ণ এটা অন্য বিষয় এটা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঝুকিপুর্ণ মার্কেটে ক্ষয়ক্ষতির দায় মার্কেটের মালিক পক্ষের নয় এটা সম্পুর্ন আপনার। তবে উচ্চ শব্দে যাতে আর বক্স না বাজায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার সময় উপস্থিত মার্কেটের মালিকের এক আত্মীয় আনোয়ার শেখ জানান, কিছু দিন আগে এই রনি সাউন্ড সিস্টের বক্স গানের সাউন্ডে সেলুনের ছিলিং এর ঢালাই খসে পড়ে কুয়েটের এক ইঞ্জিনিয়ারের মাথায়। ঘটনার পর তাকে নিষেধ করা শর্তেও সে কারো নিষেধ শুনছে না। এ সময় উপস্থিত মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানায়, পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুকিপুর্ণ এই মার্কেটে ব্যবসা করা বিপদজনক জেনেও জীবনের ঝুকি নিয়ে ব্যবসা করছে তারা। এর উপর আরও বেশি ঝুকি হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কেটের রনি লাইট হাউজ এন্ড সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চ মাত্রার সাউন্ডের কম্পন। তাঁর বক্স সাউন্ডের শব্দে প্রায় এমন ঘটনা ঘটে চলেছে।
মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফুলবাড়ীগেট এলাকার সব চেয়ে পুরাতন জনতা মার্কেটের মালিক শেখ আউয়ুব আলী প্রায় আড়াই দশক পূর্বে ১৯৮০ সালের দিকে মার্কেটটি নির্মাণ করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই সন্তান শেখ বাচ্চু এবং শেখ সোয়েব আলী পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া এই জনতা মার্কেটের জরাজীর্ণ অংশের প্রায় অর্ধ শতাধিক দোকান ভাড়া দিয়ে ভোগ দখল করে আসছে। প্রায় ৪৩ বছর বছর আগের পুরাতন মার্কেটটি সংস্কার না হওয়াই এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য। জরাজীর্ণ ভবনে জোড়াতালি দিয়ে সংষ্কার করে কিছুটা উপযোগি করা হলেও দীর্ঘদিন যাবত মার্কেটের ছাদের প্রায় অধিকাংশ অংশের ছিলিং এর ঢালাই ভেঙ্গে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কয়েকটি স্থানের ছাদ ধ্বসে পড়েছে এবং প্রতিটি অংশের ছাদের ঢালাই ও পলেস্তার খসে পড়ে ছাদের পুরাতন রড বেরিয়ে পড়েছে।
মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে না করার শর্তে জানায়, মার্কেটের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানদার চরম ঝুকি নিয়ে এই মার্কেটে ব্যবসা করছে । ২/১ বছরের চুক্তিতে ঘর ভাড়া নিলেও মার্কেটে দোকান ভাড়া কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও ধারাবাহিকভাবে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যান। মার্কেটের বর্তমান যে অবস্থা তাতে যে কোন সময়ে প্রাণহানির মতো বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা দেখে দিয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমটাই আশা স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্টেট অফিসার মো. শামিম জিহাদ বলেন, কেডিএ’তে ভবন ঝুকিপুর্ণ চিহ্নিত করণে একটি কমিটি আছে। যারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঝুকিপুর্ণ কিনা তা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এই কমিটির প্রধান সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী। বিষয়টি তাদের নলেজে আসলে অথবা তাদেরকে অবহিত করা হলে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খুলনা গেজেট/এসজেড