খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে কারখানায় আগুন : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২
  হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫

ফিরে আসে না অঙ্কিতারা !

তাপস মণ্ডল

এ শহরে প্রত্যেক দিনই কত অঙ্কিতারা হারিয়ে যায় চিরতরে। যারা অন্তত শেষবারে একফোটা জল চেয়েছিল, মাকে একবার দেখতে চেয়েছিল, ঘরে ফিরে খেলনাগুলো গুছাতে চেয়েছিল, লজেন্স আর চকলেটগুলো ছোট ভাইয়ের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। তারা আর ফিরে আসেনি। বস্তাবন্দি হয়ে পঁচে গন্ধ হয়েছে তাদের শরীর। পোষ্ট-মর্টেম রিপোর্ট করতে গিয়ে ডাক্তারদের চোখের নিচ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে কয়েক ফোটা গরম জল। তার সেই বিকৃত শরীর দেখে আর কোন নরপশুর কি যৌনাকাঙ্খা জেগে ওঠে না!

আমি অবাক হয়ে যায়, কি করে একজন সম্পূর্ণ মানুষ আর এক অসম্পূর্ণ শরীরের কাছে নিজেকে ঢেলে দেওয়ার জন্য সমস্ত রকম পরিকল্পনা সাজায় ভিতরে ভিতরে। মেয়েটার বয়স মাত্র আট! যার এখনো শরীরজ্ঞান হয়নি, যে এখনো জানে না বুক কিভাবে ঢেকে রাখতে হয়, অন্য কোন হাত উরুতে লাগলে তা সরিয়ে নিতে হয়। সেই শরীরে কি প্রকারে লোভ জন্মাতে পারে! সে শরীর কি করে আর একটা শরীরকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে?

বিকৃত মস্তিষ্কের এই মানুষগুলোই সমাজের বুকে প্রভূত্ব করছে বহুদিন ধরে। হইত আরো কত মাস, বছর থেকে যুগ অথবা শতাব্দী তাদের পদতলে রেখে তারা শাসন করে যাবে সমাজ, দেশ ও নারীকে।

এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হয়তো নেই। মানুষের মধ্যে মানুষের রুপে বেড়ে ওঠা অমানুষ চেনা বড় কঠিন।

এই তো ক‘দিন আগে শিববাড়ি চত্বরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে ওঠলো। এখনো সে স্লোগানের সুর গভীর রাতে শোনা যায়। এখনো মোমবাতিগুলো নেভেনি ঠিকমত। অথচ এর মধ্যে আর একটা সুস্থ অপক্ক শরীরের শেষকৃত্য করবে তার পিতামাতা। ভাবতেও অবাক লাগে এই শহরে এতো মানুষ থাকা স্বত্বেও অঙ্কিতার মত মেয়েদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। শুধু মৃত্যুর সাক্ষী হওয়া যায়, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে অংশগ্রহণ করা যায়, রাজপথে গলা ফাটিয়ে নিজেকে জাহির করা যায়, কিন্তু অঙ্কিতাদের বাঁচানো যায় না।

এ রকম কত ঘটনা সব নিচের টেবিলে ধুলো জমে পড়ে আছে। এ রকম ধর্ষক আইনের ফাঁক ফোঁকড় গলিয়ে আবার বেরিয়ে আসবে কখন। তারপর আবার এক অঙ্কিতা, আবার এক বিভীষিকাময় মৃত্যু!

কলমের ডগায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে, বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকে সর্বহারা আত্মীয়রা। উন্মুক্ত ময়দানে সিগারেট ফুঁকে যায় ধর্ষক, আঙুল তোলে সভ্যতায়।

কে জানে কোন ঘরে এর পরের বারের ধর্ষিতা পালিত হচ্ছে! কে জানে কোন মা বাবার স্বপ্ন ভাঙতে যাচ্ছে চিরতরে! কে জানে কোন শরীর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকবে স্টেশনের উপর! কে জানে কোন শরীরের ওপর লোভাতুর চোখ পড়বে একদল কুকুরের!

অঙ্কিতা ফিরে আসবে না আর কখনো। বাবা-মার কাছে তার আর কোন ছোট্ট আবদার থাকবে না। সে আর পৃথিবীর চোখে লোভ হবে না। তার শরীর নিয়ে খেলা করার সুযোগ পাবে না আর কেউ। সে আর ছাদে উঠবে না ছোট্ট আশায়। তাকে আর কেউ হীনচোখে দেখবে না। আর কোনদিনই অঙ্কিতা কথা বলবে না, স্কুলে যাবে না, বিকেল বেলা রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখবে না, আর কখনো সে পাখির মত উড়তে চাইবে না, তার জন্মদিনে আর সে কেক কাটতে পারবে না, মার কোলে বসে কার্টুন দেখে হেসে গড়িয়ে পড়বে না। আর কখনোই অঙ্কিতা ফিরবে না তার পরিচিত কোলে। আর কখনোই না।

সে প্রতিবাদ করেনি, শুধু অস্ফুট আর্তনাদে চোখের জল ফেলেছে। কিন্তু বিপ্লবের মশাল জ্বালিয়েছে সে নিজ হাতে। এই শহর অথবা প্রত্যন্ত গ্রামে আর কোন অঙ্কিতার জীবনাবসান যেন এভাবে না হয়।

প্রত্যেক পরিবার এটাই মনে করুক, পুরুষের মধ্যে এক পশুসত্তা আছে। ওটা যে কোন সময় জেগে উঠতে পারে। ওদের থেকে দূরে রাখা উচিত নিজ সন্তানদের। বাবা ভাইদের কাছে মেয়েটা যতটা নিরাপদ অন্য কারুর কাছে সে ততটা নিরাপদ নয়। নিজের সন্তানকে ভাল রাখতে কিছুটা সামাজিকতা না হয় নাই করলেন। অঙ্কিতার পরিণতি আর কোন ঘরে কখনো না আসুক। একটা ঝলমলে সন্ধ্যা অথবা সকাল একবারে যেন আর অন্ধকার আর কালিমালিপ্ত না হতে পারে!

প্রস্তুত হোন নয় প্রতিবাদ করুন ধর্ষক আপনার ঘরেও তৈরী হতে পারে। নির্মূল করুন নয়তো ত্যাগ করুন। এ প্রতিবাদ এখন সময়ের।

লেখক : খুলনা রায়ের মহল অনার্স কলেজ’র চতুর্থ বর্ষের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ।

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!