ফরিদপুরের নগরকান্দায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কবির ভূঁইয়া (৪৯) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৮/১০ জন আহত হয়েছেন।
নিহত কবির ভূঁইয়া নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা বশিরউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি শহীদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক বলে জানা গেছে।
নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সে করে নগরকান্দা থেকে আহত অবস্থায় কবির ভূঁইয়াকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে শহিদুল ইসলাম বাবুলকে স্বাগত জানিয়ে নগরকান্দা উপজেলা সদরে তার সমর্থকদের বানানো দুইটি তোরণ ভেঙে ফেলে শামা ওবায়েদের সমর্থকরা। রাতেই শহীদুলের সমর্থক ও নগরকান্দা পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর মাতুব্বরকে ধাওয়া দেন শামা ওবায়েদের সমর্থকরা। এ নিয়ে গতকাল রাত থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আজ বুধবার সকালে নগরকান্দা বেইলি সেতুর বাজারের পাশে শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা ও জুঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ডের পাশে শামা ওবায়েদের লোকজন অবস্থান নেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শহিদুল ইসলামের ৮/১০ জন সমর্থক আহত হন। পরে শামা ওবায়েদের লোকজন শহীদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক নগরকান্দা বাজারের লঞ্চঘাটা এলাকায় অবস্থিত জাকির হোসেনের চালের ও গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ভাঙচুর করে লুট করে নিয়ে যায়।
বাজারের দোকানিরা জানান, সকাল থেকে শামা ওবায়েদ ও বাবুলের লোকজন রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নগরকান্দা বাজারে যেভাবে মহড়া দিচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে নগরকান্দা বাজারে এমন সশস্ত্র মহড়া কেউ দেখেনি।
জানা গেছে, শহীদুল ইসলাম দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে তালমার মোড় এলাকায় এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি একটি পথসভায় বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি নগরকান্দায় উড়ে আসিনি। আন্দোলন-সংগ্রাম করে নেতা হয়েছি। বিএনপি কারও বাপের দল না। বিএনপির মধ্যে আওয়ামী লীগ ঢুকে গেছে। তারাই দলের মধ্যে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করি। কেউ অশান্তি করলে তার দাঁতভাঙা জবাব কীভাবে দিতে হয় তা শহীদুল ইসলাম জানে। আমি জনগণের জন্য দল করি। এমন কোনো শক্তি নেই আমাকে আমার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্রের পরোয়া আমি করি না। রাজনীতি করলে সুন্দরভাবে শান্তির সঙ্গে করুন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সরকারের পতনের পর গত ১২ আগস্ট ছাদখোলা গাড়িতে নগরকান্দায় এসে শান্তি সমাবেশের নামে শোডাউন করেন শামা ওবায়েদ। ওইদিন তিনি কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া তার কর্মসূচি পালন করেন। তবে আজকে শহীদুল ইসলামের শোডাউনে তার সমর্থকরা বাধা দিল।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন না রিসিভ না করায় তার সঙোগ কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, শামা ওবায়েদ নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে.এম.ওবায়দুর রহমান। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন শামা ওবায়েদ। অপরদিকে শহীদুল ইসলাম নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে আগে থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। আজকের ঘটনা তা প্রকাশ্য রূপ নিল।
নগরকান্দা থানা পুলিশের ওসি আমিনুর রহমান জানান, কৃষক দলের শহীদুল সভা করতে চাইলে বাধা দেন বিএনপির শামা ওবায়েদ গ্রুপ। এ নিয়ে দুই পক্ষ সকাল থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে জানা যায়নি। আমরা মাইকিং করে দুইপক্ষকে সরিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
খুলনা গেজেট/এএজে