খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই
চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ফজর থেকে মুসল্লীদের ভিড়, আল্লামা আহমদ শফীর দাফন মাদ্রাসাতেই

গেজেট ডেস্ক

সংগৃহীত
সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের জানাজা শনিবার ১৯ (সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য ফজরের পর থেকেই হাজার হাজার আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছেন। কুমিল্লা, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বহু কওমী মাদ্রাসা থেকে বিপুল শিক্ষার্থী ও আলেমরা জানাজায় অংশ নিতে আসছেন।

ঢাকা থেকে রাত ২টায় সড়ক পথে রওনা হয় আল্লামা শফীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ তাঁর মরদেহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পৌঁছায়।

হাটহাজারী মাদরাসার দক্ষিণ গেটে শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ছাত্রদের প্রিয় হুজুরকে দর্শনের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হবে। জোহরের নামাজের পর মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল জামেয়ার গোরস্থানে দাফন করা হবে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরকে।

আহমদ শফীর বড় ছেলে ও রাঙ্গুনিয়ার পাখিয়ারটিলা কওমী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি বলেন, ‘উনাকে (আহমদ শফী) রাতেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। শনিবার বাদ জোহর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মাদ্রাসার কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।’

দাফনের কর্মসূচি জানিয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানী। তিনি ও তাঁর পরিবার আহমদ শফীর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

সংগৃহীত

এদিকে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শফী হুজুরের জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আজ শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানাজার স্থান হাটহাজারীতে চার প্লাটুন, পটিয়ায় দুই প্লাটুন, রাঙ্গুনিয়ায় দুই প্লাটুন ও ফটিকছড়িতে দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে।’

এদিকে, জেলা প্রশাসনের জেএম শাখা থেকে বিজিবি সদস্যদের আইনানুগ নির্দেশনা প্রদান করার জন্য সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ উল্লাহ, আবদুস সামাদ শিকদার, মামনুন আহমেদ অনীক ও মো. উমর ফারুক হাটহাজারী উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফখরুল ইসলাম রাঙ্গুনিয়ায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইনামুল হাছান পটিয়ায় এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ফটিকছড়িতে দায়িত্ব পালন করবেন।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ-র‍্যাবের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা শনিবার থেকে মাঠে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে শুক্রবার সন্ধ্যায় আহমদ শফী মারা যান।

আহমদ শফী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হেফাজতের আমিরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠের পাশে অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির সভায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও শুরা সভার প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল।

আল্লামা আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা।

আহমদ শফী ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামী শিক্ষালাভের উদ্দেশে ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায়। সেখান থেকে হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৪১ সালে চলে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানীর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ এবং তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত হন।

ভারত থেকে দেশে ফিরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব নেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৮ সালে আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

আল্লামা আহমদ শফি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর লেখা ‘হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব’, ‘ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা’, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’, ‘হাদিসসমূহের ব্যাখ্যা’সহ ২২টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ৫০ লাখের বেশি মুরিদ ও ভক্ত রয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর।

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!