খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা থেকে হংকং যাওয়ার পথে ফ্লাইটে বাংলাদেশি যাত্রীর মৃত্যু
  আনিসুল-সালমান-মামুন-পলক-মানিক নতুন মামলায় গ্রেপ্তার
  কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ গ্রেপ্তার

প্লাস্টিক পোড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর পৌর সদরের জনবসতিপূর্ণ সোয়ালিয়া এলাকায় পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। নষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও গন্ধে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। সর্বোপরি যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে আশপাশের কৃষি জমির উপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামনগর পৌর সদরের ১৫ নং সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সীমানা ঘেঁষেই দাউ দাউ করে জ্বলছে প্লাস্টিকের জুতা ও রাবার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর সড়ক নির্মাণের সামগ্রী প্রস্তুত করতে পোড়ানো হচ্ছে এসব প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। আর পরিবেশ তো দূষিত হচ্ছেই। বিদ্যালয়টির চারপাশে হাজার হাজার মানুষের আবাসস্থল। পরিবেশ নষ্টকারি এই কালো ধোয়া ও গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরাসহ আশেপাশের জনসাধারণ। নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমির ফসল। সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের পাশে ২-৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী এই অপকর্ম। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন শ্যামনগর উপজেলার এলজিইডির বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জন্য সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সীমানার পাশের জায়গাটি বেছে নিয়েছেন। এখানে জ্বালানি হিসেবে তুষ ও কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পুরাতন জুতা, পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ নানা রকমের ভাঙারি দ্রব্য। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা পরিবেশ-গাছপালা ও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকির তোয়াক্কা না করে এসব অপদ্রব্য পুড়িয়ে যাচ্ছেন। নষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পোড়ার গন্ধে এলাকার পরিবেশ ও জনজীবন বিষিয়ে উঠেছে।

সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টির কাছেই রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানো হচ্ছে। এখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে প্লাাস্টিকের জুতা-রাবার। এসব ভাঙারি পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিদ্যালয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অনেক শিশুরা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কালা ধোয়ার ফলে কোমলমতি শিশুরা ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাদের চোখ জ্বালাসহ শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের এই বিদ্যালয়ে আর পাঠাতে চাচ্ছেন না। এছাড়াও প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বিদ্যালয়ের লোহার আসবাবপত্র, গ্রিলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভাঙরি পোড়ানো বন্ধের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের মালিক নুরুল হক মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমার কাজ হচ্ছে না, হচ্ছে জাকাউল্লাহ সাহেবের কাজ।

এ বিষয় জানার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রার্দাসের চেয়ারম্যান মোঃ জাকাউল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার রিং করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!