খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

প্রিয় নবী‌জির ইয়াহু‌দী খাদেম

মুফ‌তি সাআদ আহমাদ

ইয়াসরিব তখনও মদীনা হয়নি। এখানে ছিলো ইয়াহুদীদের আদি নিবাস। নবীজি সা. হিজরত করে আসলেন। সত্যের প্রদীপ জ্বালালেন। আলোয় আলোয় ভরে দিলেন ইয়াসরিববাসীর হৃদয়জগত। তাঁর উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসতে লাগলো। পৃথিবীর মানচিত্রে স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একখন্ড ভূস্বর্গের আবিস্কার হলো। “মদীনাতুর রসুল” নবী মুহাম্মাদ সা. এর শহর।

এই শহরের এক ছোট্ট বালক। সবেই শুনেছে নবাগত নবী মুহাম্মাদের নাম। তিনি নাকি ছোটদের খুব স্নেহ করেন। আদর করে কাছে টেনে নেন। পরম ভালবাসায় হাত বুলিয়ে দেন তাদের মাথায়। তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হলো বালকের।
দেখা হলো। কথাও হলো। আরো কি হল?

মনের অজান্তেই দুজনের মাঝে এক অকৃত্রিম ভালোবাসা সৃষ্টি হল।
ভালো লাগে নবীজির পাশে পাশে থাকতে। নবীজির মুখের দিকে চেয়ে তার কথা শুনতে। তার সাহচর্য লাভে পূর্ণ হতে। তার খেদমত করে ধন্য হতে।

কিন্তু বাধা একটাই। অনেক বড় বাধা। তার মাঝে আর নবীজির মাঝে ধর্মের এক বিশাল প্রাচীর। সেতো ইয়াহুদি। তার মা-বাবাও ইয়াহুদি। তাহলে…?

বালক তার বাবার সাথে এ নিয়ে অনেক কথাই বলেছে। বলেছে নবীজি সা. এর সুন্দর চরিত্রের কথা। তার স্নেহ ও প্রীতির কথা। কিন্তু বাবা ইসলামের কথা শুনতেই নারাজ।

এতো দিনে নবীজি সা. এর সাথে তার সম্পর্কেরও বেশ উন্নতি হয়েছে। এখন তো সে নিয়মিত নবীজির খাদেম। তিনি অজু করতে চাইলে পানি নিয়ে আসে এই বালক। তিনি মসজিদে প্রবেশের সময় জুতা তুলে নেওয়া। বের হওয়ার সময় জুতা নিয়ে হাজির হওয়া বালকের প্রতিদিনের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।

বেশ কিছু দিন হলো বালকের দেখা নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাওয়া গেল না তাকে। ভাবতেই প্রিয় নবীর মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কোন বিপদ হলো না তো? নাকি ওরা মদিনা ছেড়ে চলে গেল? আবার কোন অসুস্থতাও তো হতে পারে!
নবীজি মসজিদে নববীতে বসে আছেন। একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা নিয়ে এসেছে।

ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার সেই ইয়াহুদি খাদেমের সন্ধান পেয়েছি। বেশ কিছু দিন ধরে সে খুব অসুস্থ ছিল। আর এখন তো একেবারে মৃত্যুর বিছানায়। পরিবারের লোকেরা কান্নাকাটি করছে। হয়তো আর বেশী সময় হাতে নেই।
আগন্তুক লোকটি এক শ্বাসে সবগুলি কথা বলে তবেই থামলো। লোকটি এখনো হাপাচ্ছে। আর তাকিয়ে আছে নবীজির চেহারের দিকে। কি বলবেন তিনি!

নবীজি মুখে কিছুই বললেন না। চট করে উঠে মসজিদ থেকে বেরিয়ে বালকের বাড়ির পথ ধরলেন। উপস্থিত সাহাবীরাও কিছু না বুঝেই নবীজির পিছে পিছে ছুটলেন। তারা আগে কখনো নবীজিকে এতোটা অস্থির হতে দেখেন নি। আগুন্তুকের কথায় যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। যেন তার আপন কেউ শেষ বিদায় নিতে যাচ্ছে।

নবীজি দোর ঠেলে ঘরে ঢুকলেন। ধির পায়ে হেটে গিয়ে বালকের শিয়রের কাছে বসলেন। পরম স্নেহে তার মাথায় রহমতের হাত দুটি বুলিয়ে দিলেন। ততক্ষনে বালক নবীজিকে এক নজর দেখে নিয়েছে। চোখ বুজে নবীজির হাতের উষ্ম পরশ উপভোগ করছে। যেন সারা শরীর রহমতের জোয়ারে আন্দোলিত হচ্ছে।

পাশেই তার বাবা বসে আছেন। টিপ টিপ চোখে দেখছেন নবীজি সা. কে। এই কি সেই আরবের নবী মুহাম্মাদ সা.। এতো নূরানী চেহারা। এতো অমায়িক ব্যবহার তার । এত মমতায় ভরা তার মন। শুনেছি সে নাকি মুসলমানদের সর্দার। তবুও আমার ছোট ছেলেকে দেখতেই ছুটে এসেছেন!

নবীজি সা. এর এদিকে কোন ধ্যান নেই। তিনি ভাবছেন অন্য কিছু। ভাবছেন তার মুক্তির উপায়।
ছেলেটি যে এখনো ইমান আনেনি।
এখনো তো সে কালেমা পড়েনি।
এই অবস্থায় যদি সে মারা যায় পরকালে কি হবে তার!

নবীজি তার মুখ খানা বালকের কানের কাছে নিয়ে গেলেন। বিড় বিড় তার কানে ঢেলে দিলেন পবিত্র কালিমার দাওয়াত। উভয় জাহানের সফলতার সোপান। চিরমুক্তির পয়গাম। “আসলিম” হে বালক! ইসলাম গ্রহন করে নাও। একবার কালিমা পড়ে নাও। যাতে আমি পরকালে তোমায় শাফায়াত করতে পারি। হাউজে কাউসারের পাড়ে যেন তোমার আমার আবার মিলন হয়। মাটির পৃথিবীতে যেমন তুমি আমার সাথে সাথেই থাকতে। দুজন যেন হতে পারি পরকালেরও সাথি।
বালক ঠোট নাড়িয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু সামনেই নিজের বাবা কে দেখে থমকে গেলো। অপলক নেত্রে চেয়ে রইলো বাবার দিকে। চোখের ভাষায় বাবাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা…

“একটি বারের জন্য মুহাম্মাদ সা. এর পবিত্র কালিমাটি পড়তে চাই। আমি মুসলমান হয়ে মরতে চাই”
পুরো ঘর জুড়ে তখন রাজ্বের নিরবতা। বালক তাকিয়ে আছে পিতার মুখের দিকে। বাবা কি অনুমতি দিবেন?
সে কি পারবে কালিমা পড়ে মরতে?
সে কি পারবে পরকালেও তার প্রিয় হাবিবের সাথি হয়ে থাকতে?
জান্নাতের সবুজ উদ্যানে একসাথে বিচরণ করতে?

“আতি আবাল কাসিম সা.” অর্থাৎ আবুল কাসিম নবী মুহাম্মাদ সা. এর কথাই মেনে নাও। বালকের বাবার এই কথায় সব নিরবতার অবসান হলো। বাবার কথায় যেন বালকের হৃদয়জুড়ে বাধভাঙ্গা খুশির তুষারপাত হতে লাগলো। অসুস্থ বদনখানি কোন রকম সামলে নিয়ে এক ফালি হাসি ফোটালো ঠোটের কোনায়। চোখের পানি মুছতে মুছতে পবিত্র কালিমা পাঠ করলো শরিরের সবটুকু শক্তি উজাড় করে। (আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু)। সাথে সাথে প্রিয় নবীজি সা. ও বলে উঠলেন- “শুকরিয়া মহান আল্লাহর যিনি তাকে আগুন থেকে মুক্ত করলেন। (সহীহ বুখারীর ১৩৫৬ নং হাদীস অবলম্বনে)




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!