এক্স (সাবেক টুইটার), টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেই ভিডিওটি প্রকাশের পর থেকে প্রশ্ন উঠছে— নিজের জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে কি আগেই অবগত ছিলেন ওয়াগনার প্রধান?
ভিডিওটি তার মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে আফ্রিকায় ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে তিনি তার সুস্থতা এবং নিজের নিরাপত্তায় ঝুঁকি নিয়ে ছড়ানো নানা গুঞ্জনের জবাব দিচ্ছিলেন।
ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ওয়াগনার গ্রুপের চ্যানেল ‘গ্রে জোন’। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ধারণ করা সেই ভিডিওটিতে প্রিগোজিন নিজের সুস্থতা এবং নিরাপত্তায় ঝুঁকি নিয়ে ছড়ানো নানা গুঞ্জনের জবাব দিচ্ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা আমি বেঁচে আছি, নাকি মরে গেছি, আমি কী করছি এসব নিয়ে আলোচনা করছেন এটা তাদের জন্য। এটা অগাস্ট মাসের দ্বিতীয়ার্ধ, এই মুহূর্তে এটা উইকেন্ড এবং আমি আফ্রিকায় আছি।’
‘তাই ওই সব মানুষ যারা আমাকে মুছে ফেলতে আলোচনা করছেন, অথবা আমার ব্যক্তিগত জীবন, আমি কত আয় করি বা যেকোনো কিছু, তাদের জন্য জন্য বলছি, সবকিছু ঠিক আছে।’
ভিডিওতে প্রিগোজিনকে একটি চলন্ত গাড়িতে দেখা যায়। তিনি যথারীতি ক্যামোফ্লেজ পোশাক পরে ছিলেন, মাথায় টুপি এবং ডান হাতে ঘড়ি ছিল।
এর আগে গত ২১ অগাস্ট একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন ভিডিওতে তার চেহারা ও আশেপাশের সঙ্গে ওই ভিডিওর মিল রয়েছে। আগের ভিডিওতেও তিনি আফ্রিকায় অবস্থান করার কথা জানিয়েছিলেন।
নতুন ভিডিওতে তিনি যে ‘উইকেন্ড’ কথাটি বলেছেন সেটা বিবেচনায় নিলে ওই ভিডিওটি অবশ্যই ১৯ অথবা ২০ অগাস্ট ধারণ করা। অর্থাৎ তার তিন অথবা চারদিন পর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনি নিহত হন।
গত ২৩ অগাস্ট মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে প্রিগোজিনকে বহন করা বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার সঙ্গে তার ডান হাত বলে পরিচিত তার প্রধান সহচর দিমিত্রি উৎকিন এবং তার শীর্ষ সহযোগী ভ্যালেরি চেকালভ এবং তার চারজন দেহরক্ষী ছিলেন। দুর্ঘটনায় ৩ জন ক্রুসহ সব যাত্রীর মৃত্যু হয়।
প্রিগোজিনকে বহন করা বিমানটি ঠিক কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক দুই মাস আগে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার প্রতিরক্ষা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। যে বিদ্রোহের আয়ু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মত হলেও সেটি রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। নিজের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে এ আচরণ স্বাভাবিকভাবেই দারুণ অপমানের ছিল পুতিনের জন্য।
পুতিন বিদ্রোহের ওই ঘটনাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা বলে বর্ণনা করে ওয়াগনার বাহিনীকে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পশ্চিমা অনেক সংবাদমাধ্যম এবং রাজনীতিবিদদের অনেকেই সরাসরি বা পরক্ষোভাবে বলেছেন, পুতিনের নির্দেশে রাশিয়ার সেনাবাহিনীই গুলি করে বিমানটি ভূপাতিত করে।
রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যাল ক্রেমলিন অবশ্য এই দাবিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে। কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিটি কাজও শুরু করেছে।
গত মঙ্গলবার প্রিগোজিনকে সেন্ট পিটার্সবার্গে তার বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
খুলনা গেজেট/এইচ