পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে পাঠদান শুরু নির্দেশনায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরাই। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেও পৌঁছায়নি এ খবর। খুলনার সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, খোদ শিক্ষকরাই অপ্রস্তুত; অনলাইনে ক্লাস শুরুর বিষয়টি জানে না অধিকাংশ শিক্ষার্থীও। পাঠদানের প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত সরমঞ্জামাদির সংকটের মধ্যদিয়েই আগামীকাল রবিবার (০৪ অক্টোবর) শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে কোভিড-১৯ এর কারণে আপাতত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না হয়- সে উদ্দেশ্যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের আগামী ৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
অন্য বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনই ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হলেও এবার মহামারি করোনার কারণে বিলম্বিত হয় ভর্তি প্রক্রিয়াই।
খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের বিষয়টি জানাতে পারিনি। তবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি- রবিবার থেকে অনলাইনে অন্তত একাধিক ক্লাস নিতে পারবো। ক্লাসটি রেকর্ড বা লাইভ কলেজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হবে। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করেই অনলাইন ক্লাস নেবার নির্দেশনাটি আসায় প্রস্তুতি নিতে পারিনি। রাতের মধ্যে ভিডিও ক্যামেরা কিনতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অভিজিৎ বসু বলেন, বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেয়ার একটা নির্দেশনা এসেছে। মাঝে শুক্রবার গেল এ জন্য একটু…! যাইহোক- আমরাও ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়েছি। ক্লাস রুটিন সন্ধ্যা নাগাদ কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। ক্লাসগুলোও রেকর্ড করে ওয়েব সাইটে ছেড়ে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
অনুরূপ কথা বললেন সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুল মজিদ সরদার।
সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর গোপাল চন্দ্র মন্ডল বলেন, আগামীকাল (রবিবার) আমরা পদার্থ, হিসাব বিজ্ঞান, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা, ইতিহাস ও ইসলামী ইতিহাসের ক্লাস নেবার প্রস্তুতি নিয়েছি। জুম অ্যাপের মাধ্যমে আমরা ক্লাস নিয়ে থাকি। করোনাকালীন পরিস্থিতির শুরু থেকেই অনলাইন ক্লাসে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত।
কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দু/একটি কলেজ ব্যতীত অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। তাছাড়া সকল শিক্ষার্থীর হাতেও নেই প্রযুক্তি। শহরের তুলনায় গ্রামের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা আরও পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র্য শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। অর্থাভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা আরও পিছিয়ে পড়বে। চাকরি বাঁচানোর তাগিদে কলেজ অধ্যক্ষরা অনেক তথ্যই গোপন রাখছেন বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষক।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্যা আমির হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই অনলাইনে তো শিক্ষকরা ক্লাস কমবেশি নিচ্ছিলেন। রবিবার নতুন শিক্ষাবর্ষের অনলাইন ক্লাস উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী। পরিস্থিতির কারণে আপাতত অনলাইন ক্লাস নিয়মিত করতেই কলেজগুলোকে নির্দেশণা দেয়া হয়েছে। আশা করছি- শ্রেণি কক্ষে উপস্থিতির চেয়েও অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ বেশি হবে। প্রত্যেকের হাতেই এখন ইন্টারনেট সংযুক্ত স্মার্ট ফোন রয়েছে। ইচ্ছা করলেই ক্লাসের জঠিল বিষয়গুলো ডাউনলোড করে রাখতে পারবে বা বারবার দেখতে পারবে অনলাইনে। নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই উপকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি তো না থাকার কথা নয়। প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতেও তো স্মার্টফোন রয়েছে। প্রয়োজনে মোবাইলের মাধ্যমে পাঠদান ও পাঠ্য গ্রহন করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে সারাদেশে অন্তত ১৭ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন