বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ ১৪ জন পলাতক রয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
পলাতক আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, শরীফুল ইসলাম ভূইয়া, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।
এছাড়া এই মামলায় আরও ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সোমবার পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে বিপিএসসি’র উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও আবেদের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম রয়েছেন। রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– বিপিএসসি’র উপপরিচালক আবু জাফর, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের মামুনুর রশীদ, ব্যবসায়ী দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন, বেকার যুবক লিটন সরকার, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাকর্মী শাহাদাত হোসেন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান।
সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, পিএসসি’র সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকাণ্ড ও দান করার বিষয়ে নানা খবর। পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে আবেদ আলী পাড়ি জমান ঢাকায়। সে সময় অনেক কষ্টে দিন কাটাতেন তিনি। এরপর শেখেন গাড়ি চালানো। চাকরি নেন বিপিএসসিতে। দিনে দিনে জড়িয়ে পড়েন বিসিএসসহ বিপিএসসি’র অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রে।
তবে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিপিএসসি। সোমবার রাতে কমিশন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বা প্রতারণা বা অন্য কোনো অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে কেউ জড়িত প্রমাণিত হলে কমিশন সংশ্লিষ্টের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক যুগে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, গত ১২ বছরে বিপিএসসিতে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো মহল থেকে কখনোই কোনো ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না। তাই এটি প্রমাণিত যে, ওই সব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে নতুন করে কোনো অভিযোগ উত্থাপনের অবকাশ নেই।
খুলনা গেজেট/এএজে