খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

প্রশ্নফাঁসের তদন্তে এবার বুয়েট শিক্ষকের নাম!

গে‌জেট ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক জড়িতদের নাম।

প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জড়িত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কর্মরত একাধিক জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে। এবার ওই পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের বিরুদ্ধে। নিখিল বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপা হওয়ার পর তিনি একটি বা দুটি সেট নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেন। তবে এই প্রশ্নপত্র ব্যাগে নিয়ে কী করতেন, সেটি এখনও জানা যায়নি।

প্রশ্নপত্র ছাপাখানা থেকে নিয়ে নিখিল কোনো পরীক্ষার্থীকে দিতেন কি না সেটি যাচাই করছে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ।

শুক্রবার ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘আমরা এই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের নামই পাচ্ছি। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় তাদের কী ভূমিকা থাকত, সেটি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটিকে জানাব।’ তিনি বলেন, ‘কমিটির বক্তব্য ও আমাদের তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র নিজের ব্যাগে নেয়ার বিষয়টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজবাংলার কাছে স্বীকার করেছেন বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। তিনি দাবি করেছেন, চেক করার পর ওই প্রশ্নের সেটগুলো ময়লার স্তুপে ফেলে আসতেন। ওই ময়লার স্তুপের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির লোকজন।

৬ নভেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭জন।

পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থীরা। প্রশ্নফাঁস হতে পারে এই আশঙ্কায় পরীক্ষার আগে থেকেই কাজ শুরু করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। সঙ্গে যুক্ত হয় ডিবির তেজগাঁও বিভাগ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ হাতেনাতে পায় তারা।

পরীক্ষার দিন ৬ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। এরা হলেন মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন।

১১ নভেম্বর আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ। এরা হলেন এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবি জাহিদ।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ নভেম্বর দক্ষিণখান থেকে আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির অফিস অ্যাটেনডেন্ট দেলোয়ার হোসেন ও আহছানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনসের কাটিংম্যান দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেয়া তথ্যে মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার হন আহসান উল্লাহর ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পারভেজ মিয়া। তারা তিনজনই আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর কারাগারে আছেন।

তদন্ত সংস্থা ডিবি জানিয়েছে, দেলোয়ার হোসেন ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আহসানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার কাজী শফিকুল ইসলামের অফিসে পিওন হিসেবে চাকরি করতেন। কয়েক মাস পর জানতে পারেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা ও পরীক্ষার টেন্ডার পায় আহসানউল্লা। যেহেতু ট্রেজারার পরীক্ষা কমিটিতে থাকতেন, সেহেতু তাকে প্রশ্ন ছাপার বিভিন্ন কাজে নেয়া হতো।

ডিবি জানিয়েছে, এ কাজে নিয়মিত আশুলিয়ায় আহসানিয়া মিশনের নিজস্ব ছাপাখানায় যেতেন দেলোয়ার। সেখানে নজরদারি ও নিরাপত্তায় অভাব ছিল। সেই সুযোগে দেলোয়ার লুকিয়ে প্রশ্ন নিয়ে বের হতেন।

বাহিনীটি বলছে, দেলোয়ার জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অল্প টাকায় পরীক্ষার টেন্ডারগুলো আনতেন বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর। তিনিই সব কাজ করতেন এবং সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রতিবার প্রশ্ন ছাপার পর দুই সেট প্রশ্ন তিনি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেন। তিনি নিজেও অনেকবার নিখিলের ব্যাগে প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কোনো প্রশ্ন বা শব্দ করলে দেলোয়ারের চাকরি খেয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন নিখিল।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!