একদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ডিজিটাল হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়ছে ‘ই’ নির্ভর। অপর দিকে জীবনযাপন সহজ করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহারের সঙ্গে তার বর্জ্যও বাড়ছে। দেশে প্রতি বছর ২৮ লাখ মেট্রিকটন ই-বর্জ্য উত্পন্ন হয়ে থাকে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো নীতিমালা।
বক্তারা বলেছেন, অবিলম্বে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখন সময়ের দাবি। তাদের মতে, এসব বর্জ্যে সীসা, পারদের মতো আরো অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে। যা মাটি, পানি, বায়ু দূষণের পাশাপাশি এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের কারণে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ই-বর্জ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে যা নতুন করে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস’ আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮ লাখ মেট্রিকটন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। গত দুই দশকে শুধু সেলফোন থেকে উৎপন্ন হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৫০৪ টন। এছাড়াও প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২টি টিভি অকেজো হয়ে যায় এবং তা থেকে ১৭ লাখ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রায় ৫০ হাজার শিশু এই বর্জ্য সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর যে পরিমাণ শিশুশ্রমিক মৃত্যুবরণ করে তার প্রায় ১৫ শতাংশ ই-বর্জ্যজনিত কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও ৮৩ শতাংশ মানুষ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসে।
এ অবস্থায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুসারে ‘ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম-কানুন’ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং ২০১১ ও ২০১৩ তে সেটি সংশোধন করা হয়। তবে এই আইনের কার্যকর ব্যবস্থা ও বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি আজ অবধি দেখা যায়নি। ‘ভয়েস’ আয়োজিত কর্মশালায় জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সরকারের কাছে এই বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ণের দাবি জানান হয়।
বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার এবং কার্যকর ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কর্মশালায় এনজিও, তরুণ উদ্যোক্তা, লেখক ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদের পরিচালনায় কর্মশালায় মূল তথ্য উপস্থাপন করেন আবতাব খান শাওন। বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সেলিম সামাদ, জামাল উদ্দীন, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আইরিন জামান, নদী গবেষক শেখ রোকন, নারী নেত্রী বাসন্তি সাহা প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেএম