খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার বড় বাজারের পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস
  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রয়াত হলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি

গেজেট ডেস্ক

২৫ দিনের যুদ্ধ শেষ। হাসপাতালেই প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি (৭২)। গত ১৯ অগস্ট শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে ভর্তি করানো হয়েছিল দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এ। প্রথম থেকেই আইসিইউয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে অবস্থার অবনতি হয়। কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য নিতে হয় চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু জানিয়েছেন, সীতারাম আর নেই। দুপুর ৩টে তিন মিনিটে প্রয়াত হন সীতারাম।

গত ৮ অগস্ট দিল্লিতে ইয়েচুরির চোখে ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই দিনই প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু শারীরিক কারণেই পর দিন কলকাতায় বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রায় ইয়েচুরি আসতে পারেননি। ২২ অগস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুদ্ধবাবুর স্মরণসভাতেও থাকতে পারেননি। তার দু’দিন আগে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল এমসে।

আগামী শনিবার এমসেই সীতারামের শেষ ইচ্ছা অনুসারে দেহদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার সীতারামের দেহ রাখা থাকবে এমসে। শনিবার সকাল ১১টার সময়ে নয়াদিল্লির গোল মার্কেটে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর একে গোপালন ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে প্রয়াত নেতার দেহ। বেলা ৩টে পর্যন্ত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য দেহ রাখা থাকবে সেখানেই। তার পর এমসে দেহদান করা হবে।

১৯৫২ সালের ১২ অগস্ট ইয়েচুরির জন্ম মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই)। পৈতৃক বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদে। স্কুলশিক্ষা প্রথমে সেখানেই। ১৯৬৯ সালে দিল্লির প্রেসিডেন্ট এস্টেট স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অর্থনীতিতে স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। তার পর স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ।

জেএনইউয়েই ইয়েচুরির বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে যোগ। সেখানে পড়াকালীনই সিপিএমের সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং পুরো সময়ের রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই)-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হন। ১৯৮৪ সালে এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সভাপতি। সিপিএমের অন্ধ্রপ্রদেশ (তখন অবিভক্ত) রাজ্য কমিটিতে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সাল থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০১৫ সালে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে তিনি সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলা থেকে নির্বাচিত হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন ইয়েচুরি। ঘটনাচক্রে, বাংলা ভাষাতেও সড়গড় ছিলেন ইয়েচুরি। বলতে পারতেন দিব্যি।

২০২১ সালে ইয়েচুরির পারিবারিক জীবনে একটি বিপর্যয় ঘটে। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র আশিস ইয়েচুরি (৩৫) কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুসের জটিল সংক্রমণে মারা যান।

সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীতারামের মতো রাজনীতিকের মৃত্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেকও সীতারামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, প্রবীণ সিপিএম নেতার সংসদীয় রাজনীতির বিষয়ে গভীর ধারণা ছিল।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ও তাঁর পরিবার এবং পার্টির প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সীতারাম ইয়েচুরি ভারতের নতুন ধারার জনবান্ধব কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর মধ্যে পা-িত্য ও জনপ্রিয়তার একটা সংমিশ্রণ ছিল। বক্তা হিসেবেও তিনি আকর্ষণীয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ব গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিবৃতিদাতারা হলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা জেলা ও মহানগরের পক্ষে জেলা সভাপতি কমরেড এড. মিনা মিজানুর রহমান, মহানগর সভাপতি কমরেড শেখ মফিদুল ইসলাম, জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড দেলোয়ার উদ্দিন দিলু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক কমরেড এস এম ফারুখ-উল ইসলাম।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!