খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ঢাবির জগন্নাথ হলের ছাদ থেকে পড়ে সঞ্জু বাড়ই নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু
  জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
  সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর হাত, পা বাঁধা অবস্থায় অপহৃত খাদ্য কর্মকর্তা উদ্ধার

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের একাধিক প্রস্তাব বিএনপির, জামায়াতের দাবি ত্রুটিপূর্ণ

গেজেট ডেস্ক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ফর্মুলা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১১তম দিনের সংলাপে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই দিনে কমিশনের পক্ষ থেকেও প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংশোধিত ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার এসব প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আলোচনার আগেই জামায়াতে ইসলামী বলেছে, বিএনপির ফর্মুলা ত্রুটিপূর্ণ। অন্যদিকে, সংসদের সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে বাছাই এবং প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের র‌্যাঙ্ক চয়েজ পদ্ধতিতে (পছন্দক্রম ভোটে) প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ফর্মুলা দিয়েছে এনসিপি।

গতকালের সংলাপে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে নয়, মন্ত্রিসভার অনুমোদনে ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি। জরুরি অবস্থা অনুমোদন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতা উপস্থিত থাকবেন।

কমিশনের প্রস্তাব ছিল, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিই হবেন প্রধান বিচারপতি। জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল এতে একমত ছিল। বিএনপির প্রস্তাব ছিল, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির একজনকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। গতকালের সংলাপে ঐকমত্য হয়, জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে যদি কোনো দলের আপত্তি থাকে, তবে তারা দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির একজনকে প্রধান বিচারপতি করার প্রস্তাব রাখবে। নির্বাচনে জয়ী হলে তারা সংবিধান সংশোধনে এই বিধান চালু করলে অন্যরা আপত্তি জানাতে পারবে না।

প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে কমিশনের সংশোধিত ফর্মুলা

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংলাপে বলেছেন, বৃহস্পতিবারের সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে দুটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। আজ (গতকাল) একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সোমবারের (আজ) মধ্যে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কমিশনের ফর্মুলা অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ অবসানের ১৫ দিন আগে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। এক কক্ষের সংসদ গঠিত হলে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা বা চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা বা বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠিত হবে। যদি দুই কক্ষের সংসদ হয়, তবে উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান, বিরোধীদলীয় ডেপুটি চেয়ারম্যান, উচ্চকক্ষের নেতা, উচ্চকক্ষের বিরোধীদলীয় নেতা, রাষ্ট্রপতির মনোনীত উচ্চকক্ষের একজন সদস্য এবং প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য বিরোধী দলের একজন সদস্যও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

কমিটি যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন চূড়ান্ত করতে পারে, তবে তাঁকেই প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। ঐকমত্য না হলে, প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সরকারি দল বা জোট এবং প্রধান বিরোধী দল বা জোট পাঁচজন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সংসদের উভয় কক্ষের তৃতীয় বৃহত্তম দল দু’জন করে চারজনের নাম প্রস্তাব করবে।

কমিটি এই ১৪ জনের নাম নিয়ে সংসদে শুনানি করবে। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোট বিরোধী দলের প্রস্তাব করা পাঁচজনের নাম থেকে একজনকে বাছাই করবে। একইভাবে বিরোধী দল বা জোট সরকারির দলের পাঁচজনের তালিকা থেকে একজনকে বাছাই করবে। সরকার এবং বিরোধী দল তৃতীয় বৃহত্তম দলগুলোর প্রস্তাবিত চারজনের নাম থেকে একজন করে দু’জনের নাম বাছাই করবে। সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি এবং বিরোধী দলের প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম থেকে একজনকে বাছাই করবে। সব পক্ষের বাছাই করা পাঁচটি নাম নিয়ে কমিটির সদস্যরা র‌্যাঙ্ক চয়েজ পদ্ধতিতে ভোট দেবেন। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

বিএনপির ফর্মুলায় কী আছে

বিএনপির ফর্মুলা অনুযায়ী, সংসদ বিলুপ্তির ৩০ দিন আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এ পদ্ধতি সফল না হলে, বিএনপির ফর্মুলার দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টা পদে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করবে। রাষ্ট্রপতি এই কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করতে পারবেন; কিন্তু ভোট দিতে পারবেন না।

এই পদ্ধতিতে কাউকে পাওয়া না গেলে, ফর্মুলার তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবে। তবে এ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে।

এ পদ্ধতিতেও কাউকে পাওয়া না গেলে, বিএনপির ফর্মুলার চতুর্থ প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং প্রধান বিরোধী দল বাদে সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া প্রত্যেক দলের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবে। এ কমিটিতেও রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে। যদিও এ কমিটিতে বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকারকে রাখা হয়নি বিএনপির প্রস্তাবে।

এভাবে প্রধান উপদেষ্টা পদে কাউকে বাছাইয়ে ঐকমত্য না হলে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বছরের কম, তাদের একজন নিয়োগের সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। ফর্মুলার দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, এ কমিটির সদস্য হবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার।

বিএনপির ফর্মুলায় যে তিনটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে সবগুলোতেই হয় সরকারি দলের সমতা থাকবে কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। কীভাবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই হবে– এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কমিটির মাধ্যমে বাছাই সম্ভব না হলে, যদি সংলাপে ঐকমত্য হয়, তবে সর্বশেষ পন্থা হিসেবে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি নিয়োগে রাজি নয় অনেক দল। বিএনপিও মনে করে, বিচার বিভাগকে না রাখাই ভালো। তবে এর জন্য কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবও থাকতে হবে। কমিশন এবং অন্যান্য দলের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

জামায়াত প্রস্তাব দেবে, এনসিপি চায় ভোট

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ২০০৬ সালের অভিজ্ঞতায় রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। বিএনপি যে প্রস্তাব করেছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। কারণ, বাছাই কমিটিতে রাষ্ট্রপতিকে রাখার কথা বলা হচ্ছে, অথচ রাষ্ট্রপতিই প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগকারী। নিয়োগকারী বাছাই কমিটিতে থাকতে পারেন না। জামায়াত মনে করে, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধীদলীয় নেতাকে নিয়ে বাছাই কমিটি হতে পারে। জামায়াত সোমবার বিস্তারিত প্রস্তাব দেবে।

এনসিপি চায় উচ্চ কক্ষের ভোটের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন। গতকালের সংলাপের পর দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেছেন, তাদের দল আগেই প্রস্তাব দিয়েছে সর্বদলীয়ভাবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে হবে।

দুই বিষয়ে ঐকমত্য

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ অনুযায়ী কোনো জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অসদাচরণের তদন্ত চলমান থাকলে তিনি প্রধান বিচারপতি হতে পারবেন না।

এ নিয়ম থাকায় সরকারের অপছন্দের বিচারপতিকে আটকাতে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার শঙ্কা আছে কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এবং দুই জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি কাউন্সিলের সদস্য। তারা নিশ্চয়ই নিজেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আমলে নেবেন না।

জামায়াতের ডা. তাহের বলেছেন, জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান করতে অবশ্যই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধান করতে হবে।

সংলাপে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ কিংবা অন্য যে কোনো কারণে জরুরি অবস্থা জারি হলেও নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং নিপীড়ন থেকে রক্ষার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!