খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২৭
  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার
  বগুড়ার শেরপুরে বজ্রপাতে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
  শ্রমবাজার ঘিরে সিন্ডিকেট চায় না বাংলাদেশ : প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা

জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী কৃষক আকলিমা

জুলফিকার আলী, কলারোয়া

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের নারী মুক্তি সংসদের নেত্রী আকলিমা খাতুনের রয়েছে নানা গুনের অবদান। তিনি কৃষিতে অসমান্য অবদান রেখেছেন। সে কারণে সরকার দিয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার।

২০১৬ সালে ও ২০২১ সালে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ পুরস্কার দেন। এখানে শেষ নয়। নারী জাগরণে পথিকৃৎ আকলিমা খাতুন ২০১৬ ও ২০২১ সালে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে দুই বার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

তার এই কৃতিত্ব ও সাফল্যের গল্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে আকলিমা খাতুন গানের স্বরে বলেন, ‘আমার মতো এতো সুখী, নয়তো কারো জীবন।’

তিনি বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে কোরআন তেলাওয়াত, তারপর বৃদ্ধ মায়ের কাজের সহযোগিতা করি। ঘরের কাজ সেরে জনসমস্যা নিয়ে আসা মানুষের কথা শোনা। এরপর নিজের মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এলাকার মানুষের কৃষিবিষয়ক পরামর্শ দেই। সপ্তাহে ৪দিন স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া ইউপি সদস্য হিসেবে রেজিস্ট্রার অফিসের কাজকর্মের দেখাশোনা করি। পাশাপাশি মানুষের সুবিধা-অসুবিধাও দেখা শুনা করতে হয়।

এমন কঠোর কাজগুলো একা কীভাবে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকৃতি আমাকে পরিশ্রমী হতে বাধ্য করেছে। এক সময় চাকরির আশায় টাকার কাছে হেরে গিয়েছি। অবশেষে বেছে নেয়া এ কঠিন পথ। যে কঠিন পথ এখন জীবনটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও আকলিমা খাতুন উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন। ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষক নিবন্ধন সনদও। এতকিছুর পরও মাটির দেয়াল আর টালি দিয়ে তৈরি ছোট্ট কুঁড়েঘরই আকলিমা খাতুন ও তার মা সুফিয়া খাতুনের ঠিকানা। তবে তিনি নিজেকে একজন সুখী ও অভাবহীন নারী বলেই তার অনুভুতি প্রকাশ করেন। ঘরের থালা-বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে মাঠের কৃষিকাজ করে থাকেন আকলিমা খাতুন। এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানেও অগ্রগামী আকলিমা। কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে এমন কিছু বাকি নেই যা আকলিমা খাতুনের করতে হয় না। যাতায়াতের জন্য কারো সহযোগিতা না নিয়ে নিজের স্কুটি চালিয়ে গন্তব্য পৌঁছানোর কাজটিও করতে হয় তাকে। সংসার জীবন থেকে শুরু করে কৃষিকাজ আবার জনপ্রতিনিধির কাজটি করছেন দুরান্তগতিতে। এই কাজের জন্য স্থানীয়ভাবে কয়েক বার সংবর্ধনা পেয়েছেন তিনি।

আকলিমা খাতুন ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট। অন্য ৩ বোন বিবাহিত। ১৯৭৯ সালে জন্ম নেয়া আকলিমা খাতুন স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ১৯৯১ সালে চলে যান পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক পাসের পর ভর্তি হন রাজগঞ্জ কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে মনিরামপুর কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। পরের বছর খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকে (অনার্স) ভর্তির সুযোগ হয়। মনিরামপুর কলেজ ছেড়ে ভর্তি হয় খুলনা বিএল কলেজে। বিএল কলেজে লেখাপড়া অবস্থায় ২০০০ সালে এলাকায় বন্যা হয়। খবর পেয়ে বাড়ি গিয়ে দেখেন এলাকার মানুষের কষ্টের শেষ নেই।

আরও জানা যায়, আকলিমা খাতুনের বৃদ্ধ বাবা সামসুদ্দিন সরদার ছিলেন এলাকার সফল এক কৃষক। নিজেদের পৌনে ৫বিঘা জমি চাষ করেই তাদের চলতো সংসার। কিন্তু বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় সব ফসলি জমি। কপোতাক্ষের সংযোগে কোনো বাঁধ না থাকায় জমি বাঁওড়ের সঙ্গে মিশে যায়। উপায় না পেয়ে তারা সবাই যেন সরকারি ত্রাণনির্ভর হয়ে পড়েন। ত্রাণ আছে তো খাবার আছে, ত্রাণ নেই তো খাবারের কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আকলিমার বাবাও ত্রাণ নিয়ে সংসার চালান। এর মধ্যে আকলিমাও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ শুরু করে দেয়। পাশাপাশি তার বাবাও দিনমজুরের কাজ করতেন। একদিন তার বাবা কৃষিকাজ শেষে বাসায় এসে বারান্দায় শুয়ে পড়েন। দেখে খুব কষ্ট হয় আকলিমার। তখন সহ্য করতে না পেরে নিজেও কৃষিকাজ করে সংসার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় আকলিমা। তাদের যে জমি আছে তাতে কোনো ফসল উৎপাদন করা যায় কি না এমন পরামর্শ নেন কৃষি অফিস থেকে। গ্রহণ করেন সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে নিজেই বাঁওড় সংলগ্ন দুই বিঘা জমিতে পরিক্ষামূলক ধান রোপণ করেন। জমির চাষ থেকে শুরু করে বীজ বপন, সার বোনা সব কাজ নিজেই করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা। প্রথম বছরই দুই বিঘা জমিতে ৩৮মণ ধান পান আকলিমা খাতুন। পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষিজীবী মানুষেরা তার এ কাজে উদ্বুদ্ধ হন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!