ত্রাণের টাকাও ছাড়েননি তিনি। এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর তহিবল থেকে নিয়েছিলেন ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা। এমন অভিযোগ এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে। তিনি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আইনজীবীদের দাবি, তিনি গরিবের হক মেরেছেন। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে নানা সুবিধা ভোগের অংশ হিসেবে তিনি ত্রাণের টাকাও নেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংক সুপ্রিমকোর্ট শাখায় বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের হিসাবে ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা জমা হয়। ওদিনই তিনি (বিচারপতি খায়রুল হক) নগদ ৯ লাখ টাকা ওঠান। এর পরের দিন ২৮ জুলাই নগদ ২০ হাজার টাকা নগদ উঠানো হয়েছে এবং একই দিন অপর একটি অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা তার হিসাব থেকে বিয়োগ হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা থেকে প্রাপ্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিচারপতি খায়রুল হক ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। হাইকোর্টের বিচারপতির পদে থাকা অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল’ থেকে বিচারপতি খায়রুল হককে একটি চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা দেওয়া হয়।
বিচারপতি খায়রুল হককে ত্রাণের টাকা দেওয়ার বিষয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে একটি ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয়, বিচারপতি খায়রুল হক সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তবে, সরকারের তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ত্রাণের টাকার বিষয়ে যা বলেছিলেন খায়রুল হক : প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে ওই সময় দৈনিক আমার দেশ একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ত্রাণের টাকার বিষয়ে আমার দেশের পক্ষ থেকে বিচারপতি খায়রুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই বলব না। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসকেই জিজ্ঞাসা করুন। আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছেন কেন?
বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার দাবি : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জৈষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ২০০৯ সালে একজন রানিং বিচারপতি থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিয়ে অনৈতিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কেননা এই টাকা এতিম ও গরিবের জন্য, তিনি তাদের হক মেরেছেন। তিনি এ টাকা নেওয়া খুবই নীচুতা ও নৈতিকতাহীনতার পরিচয়। এ ছাড়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত রায়ে এক ধরণের রায় দেওয়ার পর সরকারের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায়ে জাতিকে ধোকা দিয়েছেন। অবিচারকসুলভ আচরণ করেছেন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও একটি ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করেন, যা খুবই অনৈতিক।
বিচারপতি খায়রুল হকের ‘বিচারিক প্রতারণা’র বিষয়ে সুপ্রমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে রায় দিয়েছেন খায়রুল হক। সংক্ষিপ্ত রায়ে তিনি পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাখার কথা বললেও ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে তিনি সেটি পরিবর্তন করেন। সংক্ষিপ্ত এই রায়ের ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়, তখন এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন। তিনি যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন তাতে পরবর্তী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকার বিষয়টি ছিল না। এমনকি, সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও সংসদ বহাল থাকার কথাও যুক্ত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের এই বিশাল অসংগতি নিয়ে তখন জোরাল বিতর্ক ওঠে।
খুলনা গেজেট/এএজে