৩৭ বছর বয়সী রেখা বেগম। বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোয়াটী গ্রামে। ১৭ বছর আগে ছোট মেয়ের বয়স যখন ২ বছর তখন স্বামী মান্দার শেখ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান।
স্বামীর পৈত্রিক সূত্রে কিছুই জোটেনি তাঁর ভাগ্যে। তার মৃত্যুর পর ৩ সন্তান নিয়ে তার ঠাঁই হয় বাপের বাড়ি লাখোয়াটী গ্রামে। সেই থেকে শুরু ৩ সন্তান নিয়ে রেখা বেগমের সংগ্রামী জীবন।
পরের বাড়ীতে কাজ করে তিন সন্তানের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করলেও বাপের বাড়িতে থাকার কারণে ভাই-ভাবীদের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে দীর্ঘকাল। আপন ভাই-ভাবীদের বঞ্চনা থেকে রেহাই পেতে গত ১ বছর হলো রেখা বেগম দিঘলিয়া নগরঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়।
পরের পান বরজে এবং মিলের বদলী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সামান্য পারিশ্রমিক যা পায় তাই দিয়ে কোনমতে ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ এবং বাসা ভাড়া গুনতে হতো। রেখা বেগম শুধুই স্বপ্ন দেখতেন ৩ সন্তান নিয়ে কোথাও যদি স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতাম। রেখা বেগমের সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রশাসন বারাকপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়ারচর এলাকায় ৫০ শতাংশ খাস জমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তৃতীয় ধাপে ১১ টি ঘর তৈরী করেছেন। সামনের ৩ টি পিলার আরসিসি ঢালাইসহ গ্রেডবিমসহ টানা লিংটেল দিয়ে অত্যন্ত মজবুত করে নির্মিত হয়েছে এ সব ঘর।
২ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা প্রত্যেকটি ঘর তৈরী করতে খরচ হয়েছে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা। এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ৭ নং ঘরের স্থায়ী মালিক হলেন পাখি বেগম।
পাখি বেগমের মত ৩৫ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন সুবিধাভোগীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে জমির দলিল হস্তান্তর করেন দিঘলিয়া উপজেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, খুলনা শাহানাজ পারভীন, দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আলিমুজ্জামান মিলন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্যা আকরাম হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, দিঘলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল, বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন, সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ আনছার আলী, এই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ মাসুম, সাংবাদিক সৈয়দ জাহিদুজ্জামান, একরামুল হোসেন লিপু, শেখ রবিউল ইসলাম রাজিব প্রমুখ।