দলীয় অর্ধশতক পূরণের আগেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়েছিল ভারত। বিরাট কোহলি-লোকেশ রাহুলদের ব্যর্থতার পর ঋষভ পান্তের ব্যাটে কাউন্টার আক্রমণে যায় ভারত। তবে এই উইকেটকিপার-ব্যাটারকে বেশি দূর এগোতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর বাংলাদেশের গলার কাটা হয়ে ওঠে আইয়ার-পূজারা জুটি। শেষ বিকেলে পূজারাকে ৯০ রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান তাইজুল। আর দিনের শেষ বলে অক্ষর প্যাটেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তপ্ত দুপুরে যেন এক পশলা বৃষ্টি নামান মিরাজ। একাধিক ক্যাচ মিসের আক্ষেপের দিনেও শেষ পর্যন্ত ২৭৮ রান তুলতে ৬ উইকেট হারায় ভারত।
দুই ওপেনার শুভমান গিল এবং লোকেশ রাহুলের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু করেছিল ভারত। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ওভার থেকেই স্বাছন্দ্যে খেলেন ব্যাটাররা। এবাদত-খালেদরা সুবিধা করতে না পারায় দ্রুতই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন সাকিব। আর তাতে সাফল্যও মেলে। ১৪তম ওভারে তাইজুলকে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন গিল। তার আগে ২০ রান এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে।
গিল সাজঘরে ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না আরেক ওপেনার রাহুল। ১৯ তম ওভারের বোলিংয়ে ছিলেন খালেদ আহমেদ। এই ওভারের দ্বিতীয় বলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে বল ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরের ফেরার আগে নামের পাশে ২২ রান যোগ করেছেন ভারত অধিনায়ক।
রাহুল আউট হওয়ার পরের ওভারেই কোহলিকে হারায় ভারত। লেগ এবং মিডল স্ট্যাম্পের ওপর করা তাইজুলের স্টেইট ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে এক করতে পারেননি কোহলি। আর তাতে তাইজুলের আবেদনে সাড়া দিতে খুব একটা সময় নেননি আম্পায়ার। এই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাজঘরে ফিরেছেন ১ রান করে।
দলীয় অর্ধশতক পূরণের আগেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা হলেও চাপে পড়েছিল ভারত। তবে ঋষভ পান্তের কাউন্টার অ্যাটাকে আবারও খেলায় ফেরে তারা। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। তার এমন ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেটে ৮৫ রান তোলে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ভারত।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেও একই গতিতে রান তুলছিলেন পান্ত। স্পিনার কিংবা পেসার সবার বিপক্ষেই সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ৩২তম ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজকে ছক্কা মেরে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে ৫০ ছক্কার মাইলফলক স্পর্শ করেবন পান্ত। তবে পরের বলেই প্রতিশোধ নিয়েছেন মিরাজ। এই ডানহাতি স্পিনারের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এইডজে বোল্ড হয়েছেন পান্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৫ বলে ৪৬ করেছেন তিনি। তার এই ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ছিল দুটি ছক্কার মার।
পান্তের বিদায়ের পর দারুণ এক জুটি গড়েন শ্রেয়াস আইয়ার এবং পূজারা। অথচ লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন পূজারা। কিন্তু উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের ভুলে সেটা আর হয়নি। এরপর সাকিবের বলে আরও একবার ক্যাচ ফেলেছেন সোহান। তাই দ্বিতীয় সেশনে পান্তের উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এরফলে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় ভারত।
চা বিরতি থেকে ফিরে আবারও সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু আবারও ফিল্ডারদের ভুলে তা হাতছাড়া হয়। মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপে সহজ ক্যাচ তুলে দেন আইয়ার। কিন্তু সেই বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন এবাদত।
এরপর আরও একবার আউটের সুযোগ তৈরি হয়। এবার ভাগ্যের কাছে হার মানে বাংলাদেশ। এবাদতের বল আইয়ারের ব্যাট মিস করে অফ স্ট্যাম্পে লাগার পর আলো দেখা গেলেও বেলস পড়েনি। আর তাতে আরও একবার বেঁচে যান আইয়ার।
বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং আর ভাগ্যের সহায়তায় তিনবার জীবন পেয়েছে আইয়ার-পূজারা জুটি। অবশেষে পূজারাকে বোল্ড করে এই জুটি ভেঙ্গেছেন তাইজুল। পূজারা সাজঘরে ফিরেছেন নার্ভাস নাইন্টিতে। আর দিনের শেষ বলে অক্ষরকে ফিরিয়ে শেষটা মধুর করেছেন মিরাজ।
দিনশেষে ৯০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান তোলেছে ভারত। আইয়ার অপরাজিত আছেন ৮২ রান নিয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৮৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করে দিনের সেরা বোলার তাইজুল।
খুলনা গেজেট/ এমএম