বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুননির্মাণ করতে হবে। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও শোষণহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। আসুন প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা দিয়ে নতুন সমাজ গড়ে তুলি।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া।
বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া বলেন, আবার আপনাদের সামনে কথা বলতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এ বিজয় বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। শেখ হাসিনা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিশ্বাস করে পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি মেনে, দেশের আইন-কানুন মেনে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে।
এর আগে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী মঞ্চে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এ সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবেশ শুরুর পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের ছাত্র আন্দোলনে আমার সহযোগিতা করেছি। সংহতি জানিয়েছিলাম। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। ছাত্ররা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, এর ফলে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বিজয় ছাত্র ও জনতার। এই বিজয় অনেককে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকে লুটপাট করছে, এরা তাদের লোক, যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিল। সাবধান থাকতে হবে।
‘সামনের দিনে সুসংগত রেখে ধৈর্যের সাথে আমাদের এ বিজয় ধরে রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন ব্যত্যয় না ঘটে। কেউ কোনোভাবেই যেন কোনো অপকর্ম জড়িত না হয়। শুনছি, গার্মেন্টস কারখানায় আগুন দিচ্ছে। এগুলোর সাথে আন্দোলনকারীরা জড়িত নয়, এরা কখনো আন্দোলনকারী ছিল না। যারা জড়িত তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু।’
বিলম্ব না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন রাষ্ট্রপতি প্রতির এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এসময় ছাত্রদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বৈরাচার পালিয়েছে গেছে, পতন হয়েছে। কিন্তু তার দোসরা রয়ে গেছে, এরা মাথাচাড়া দিতে পারে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, অলরেডি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে যারা স্বৈরাচার সরকারকে সহযোগিতা করেছে, তাদের কাউকে রাখা হবে না। কারণ ওরা প্রবেশ করলে আবার দালালি করবে। নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। নির্বাচনের ফলে জনগণের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন হবে। সবাই আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিদেশী প্রভুদের সহায়তা ছাড়া এবারের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের ভয় নাই। আল্লাহতালার শুকুর আদায় করছি।
সমাবেশে উপস্থিত আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এমএম