খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ পৌষ, ১৪৩১ | ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৪১
  রাজশাহীতে বাসচাপায় স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজন নিহত
  দৈনিক জন্মভূমির সিনিয়র রিপোর্টার হারুন অর রশিদ (৫৫) আর নেই

প্রতিভাবান আদর্শ শিক্ষক লিপি খাতুন

একরামুল হোসেন লিপু

দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন লিপি খাতুন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের কাছে তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক। মায়ের মত স্নেহ, ভালোবাসা, আদর আর যত্ন দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে পাঠ দান করেন। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদেরও তিনি এভাবে পাঠদানে উৎসাহিত করেন। উপজেলা পর্যায়ে চার বার খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। গতবছরের ন্যায় এবছরও জেলা পর্যায়ে খুলনার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন।

লিপি খাতুন কাব্যগ্রন্থ “বন্দিনী” ‘র রচয়িতা। ভালো কবিতা লেখেন। তার লেখা কবিতা খুলনা গেজেটেও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি খুলনা বেতারের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের একজন নিয়মিত আলোচক। একজন আদর্শ গৃহিণী সফল মা, দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি।

লিপি খাতুনের বেড়ে ওঠার পেছনে কোন দারিদ্রতা ছিল না। কিন্তু পারিবারিক কিছু বাধা ছিল। সেই বাঁধাগুলো অতিক্রম করে তিনি হয়েছেন একজন সফল নারী। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার প্রতিভাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে সততা, দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব সোলায়মান বিশ্বাস। কড়া রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা। ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ছোটবেলা থেকে খুবই মেধাবী চঞ্চল এবং মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক রক্ষণশীলতা ভেদ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য ইচ্ছা শক্তি ছিল তার ভেতর।

শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভৈরব নদীর পাড়ে দিঘলিয়া গ্রামে। দিঘলিয়া (দঃ)সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক লেখা পড়ার হাতেখড়ি। এরপর দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে ১ম বিভাগে মানবিক বিভাগ হতে এসএসসি, ১৯৯০ সালে সরকারি এম এ মজিদ ডিগ্রী কলেজ থেকে ১ম বিভাগে একই শাখা থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি এবং ১৯৯৩ সালে সরকারি বিএল কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

পড়াশুনা শেষ করার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সরকারি চাকুরীর জন্য বাছাই পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতে থাকেন। ১৯৯৮ সালে সাফল্য তার হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরী পেয়ে যান এবং যোগদান করেন নিজের প্রাথমিক পাঠ শেষ করা দিঘলিয়া (দঃ)সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানের এক বছর পর ১৯৯৯ সালে প্রধান শিক্ষিকা পদে সরাসরি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ইউনিয়নে ৩৪ নং প্রতিভাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক হিসাবে সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

শিক্ষকতা এবং চাকুরীর পাশাপাশি তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৬ সালে বিএড এবং ২০১৯ সালে সাফল্যের সাথে এম এড ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছোটবেলা থেকে লিপি খাতুনের বই পড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা। চরম সামাজিক বাধা অতিক্রম করেও তিনি লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর ১ম কাব্যগ্রন্থ “বন্দিনী” প্রকাশনার দুর্দুমনীয় ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ।

লিপি খাতুন একজন সফল গৃহিণী, আদর্শ মা। তিন সন্তানের গর্বিত জননী। স্বামী অধ্যাপক মোঃ মাসুদ আলম গোলদারের কাছেও তিনি একজন গুণবতী আদর্শ স্ত্রী। স্বামী এবং দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করেন খুলনা মহানগরীর খালিশপুর গোয়ালখালী এলাকায়। স্বামীও একজন আদর্শ শিক্ষক।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ, খুলনার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে আছেন। বড় মেয়ে সাদিয়া আফরিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ECE) চতুর্থ বর্ষের একজন ডিপার্টমেন্ট এর ফাস্ট মেধাবী ছাত্রী। একমাত্র ছেলে মোঃ ফাহিম আলম গোলদার বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ খুলনার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র এবং ছোট মেয়ে নওশীন তাবাসসুম তিশা একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

পরবর্তী পর্যায়ে নিজের সততা, মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা, এবং কর্মতৎপরতার মাধ্যমে খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনসহ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেন এজন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি চাকুরী জীবনে অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে একজন আদর্শ শিক্ষকের মর্যাদার আসীন হতে পারেন সেজন্যও সকলের দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!