খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে প্রধান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়, অচিরেই বিচার কাজ শুরু হবে : আইন উপদেষ্টা

প্রতাপনগরের রুইয়ারবিলে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কিত এলাকাবাসী (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের রুইয়ারবিল এলাকায় বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত কয়েকদিনে সেখানে প্রায় ২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ নদের গর্ভে ধসে পড়েছে। ভাঙনে কপোতাক্ষে বিলিন হয়ে গেছে কয়েকটি ঘরবাড়ি। আরো বশে কয়েকটি বাড়ি ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভাঙন কবলি এলাকায় বসবাসকারি মানুষ।

ন্থানীয়রা জানান, এভাবে যদি বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকে তাহলে আমাদের বসতবাড়ি তো থাকবে না। আমরা ছেলে মেয়েদেও নিয়ে যাবো কোথায়। এরপরও আমাদের জায়গা জমি যায় যাক, কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ হোক, প্রয়োজনে আরো ভিতর দিয়ে বাঁধ করা হোক তাহলে আমাদের আর পানিতে ভাসতে হবে না। তারা জরুরীভাবে ভাঙনরোধে নদীর সাইডে বালির বস্তা ডাম্পিং ও খাঁচা ফেলার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা তৌষিকে কাইফু জানান, সিডর,আইলা, বুলবুল, ফনি ও আম্পানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রতাপনগর ইউনিয়ন বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে এই ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা প্রায় ছয়মাস ধরে পানিতে নিমজ্জিত ছিল। নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হতো এখানে। মানুষ মারা গেলে অনেক স্থানে মাটি দেয়ার জমিটুকুও জেগে ছিল না। নদী ভাঙনে মসজিদসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সেময় অবর্ণনীয দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে প্রতাপনগর ইউনিয়নবাাসীর। অনেকে নিজের পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বাঁধ ভাঙার আগে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আর জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়না। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ ভেঙে গেলে সেখানে কাজ শুরু করেন। আগে থেকে তারা কোন পদক্ষেপ নেন না। পাউবো’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে জেলার উপকূলের অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দিলে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, কোন স্থানে বরাদ্দ হলে পাউবো’র কয়েকজন সেকশাল অফিসার(এসও) ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ কিনে নিয়ে পাউবো’র এসও নিজে লেবার সর্দ্দারের কাছে ফের কাজ বিক্রি করে দেন। যে কারণে কাজের সময় কোন তদারকি থাকে না। ফলে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা লোপাট হয়ে যায়। কাজ হয় যৎসামন্য। উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সঠিক ভাবে করতে তিনি এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

প্রতাপনগরের ইউপি চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী জানান, রুইয়ারবিল এলাকায় নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এরই মধ্যে মূল বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ কপোতাক্ষ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কিত স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে বেড়িবাঁধের উপর অবস্থান নিয়েছে। বাঁধ ভাঙনের ভয়ে আরো অনেকে এলাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত কয়েকদিন আগে থেকে প্রতাপনগরের রুইয়ারবিল এলাকায় বেড়িবাঁধে আকস্মিক ভাঙন দেখা দেয়। ক্রমশঃ এই ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারন করতে থাকে। এতে করে এই এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা নাগাদ রুইয়ারবিল এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ কপোতাক্ষের গর্ভে ধসে পড়ে। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাউবোর কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করা হয়।

এদিকে বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির রুইয়ারবিলের ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর কর্মকর্তারা সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন কালে পাউবো’র কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ২২০ মিটার বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দেন। সে অনুযায়ি ভাঙন পয়েন্টে বাল্কহেড দিয়ে জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে এই বিকল্প রিং বাধ সম্পন্ন করা হবে। তবে স্থানীয়রা রিং বাঁধের পাশাপাশি মূল ভাঙ্গনে কংক্রিটের ব্লক কিংবা জিও বস্তা ডাম্পিং করার দাবি তুললে কর্মকর্তারা তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, সোমবার থেকে বিকল্প রিং বাঁধের কাজ শুরু হবে এরপর মূলভাঙ্গনে ডাম্পিংয়ে ব্যবস্থা করা হবে।
অপরদিকে গত ১৮ ঘন্টায় রুইয়ারবিলের ভাঙন পয়েন্ট থেকে দুটি ঘর সম্পূর্ণরুপে কপোতাক্ষ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখান থেকে চারটি ঘর স্থানান্তর করা হয়েছে এবং আরো কিছু ঘর স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

রুইয়ারবিল ভাঙন এলাকায় দায়িত্বে থাকা পাউবো’র সেকশনাল অফিসার (এসও) আলমগীর কবির বলেন, জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন পয়েন্টে ২২০ মিটার এলাকায় বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে ঠিকাদার বাঁধ নির্মনের কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমি এখানে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছি। আশা করছি দ্রুত এই বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রমাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের রুইয়ারবলসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ গত আম্পান থেকে ক্ষতিগ্রস্থ। তারপরও পানিউন্নয়ন বোর্ড রেগুলার রক্ষানাবেক্ষনের মাধ্যমে সেটিকে ঠিক রেখছিল। কিন্তু আমাবশ্যার গণে ও ঘূর্নিঝড় ছিত্রাংয়ের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে ওখানে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিদ্দেশনা দিয়েছে তারা সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত বাঁধ মেরামত ও ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশা করছি ৩১ অক্টোবর থেকে সেখানে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!