দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মূলত দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোকে সপ্তাহখানেক আগে অভিশংসনের পর এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং এর জেরে অবশেষে জরুরি অবস্থা জারি করা হলো।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাগারে রাখতে চায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন পেরুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর হবে। এতে করে গত এক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংস বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধের পর জননিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার অনুমতি পাবে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
রয়টার্স বলছে, গত ৭ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিশংসনের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মূলত পেদ্রো কাস্টিলোর বিরুদ্ধে আগেই অভিশংসনের প্রস্তাব এনেছিলেন দেশটির আইনপ্রণেতারা।। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পেদ্রো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ডিক্রি জারি করে দেশ শাসনের কথা বলেন।
সেসময় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পেদ্রো কাস্টিলো জানান, তিনি অস্থায়ীভাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন, ডিক্রির মাধ্যমে শাসনভার পরিচালনা এবং দেশে নতুন নির্বাচন আয়োজন করবেন। তার এ ঘোষণাকে সুষ্পষ্ট অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন তার নিজ দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা। এরপর পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন ডেকে তাকে অভিশংসিত করা হয়।
এরপরই পেদ্রোকে আটক করা হয় এবং এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিনা বোলোয়ার্তে। ৬০ বছর বয়সী দিনা পেরুর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ২০২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে তার। যদিও বিক্ষোভ শুরুর পর আগাম নির্বাচনের কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, পেদ্রো কাস্টিলোকে অভিশংসনের পর ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই কিশোর। অধিকার গোষ্ঠীর মতে, সবাই বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে, ভবনে আগুন দিয়েছে এবং বিমানবন্দরে আক্রমণ করেছে।
পরে বুধবার পেরুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলবার্তো ওতারোলা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা ভাঙচুর ও সহিংসতার কারণে সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে সম্মত হয়েছি। এর জন্য সরকারের কাছ থেকে জোরদার সাড়া প্রয়োজন।’
এদিকে বুধবার পেরুর প্রসিকিউটররা বলেছেন, বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত কাস্টিলোর ১৮ মাসের প্রাক-বিচার আটকের দাবি করেছেন তারা। পেরুর সুপ্রিম কোর্ট তাদের এই আবেদনটি বিবেচনা করার জন্য বৈঠক করেছে কিন্তু পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে।