পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দেখার পরপরই বাংলাদেশ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি এ ধরনের পরিবর্তন করে থাকে তা বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে আগে জানিয়ে দেবে এ রকম একটা বিষয় আছে। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে জানানোর কথা থাকলেও জানায়নি ভারত। তবে আবার রফতানির বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি এবং আমরা প্রত্যাশা করছি ভালো একটা ফলাফল পাব।
গেল সোমবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, এলসি খোলার পরও পণ্য না পাওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। বাজারে সংকট দেখা দিতে পারে পেঁয়াজের। তবে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছে বাংলাদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে ট্রানজিশনাল এগ্রিমেন্ট প্রযোজ্য নয় বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ভারত রফতানি বন্ধ করায় ফের অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার। বাজারে সরবরাহ থাকার পরও সোমবার সন্ধ্যা থেকেই দেশের বাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ানো হয়েছে পণ্যটির দাম। রীতিমতো মূল্যের দিক দিয়ে ফের ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়েছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে।
ওদিকে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবার নিজ দেশেই সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার রাতারাতি পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর তা তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে আর্জি জানালেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পওয়ার। তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে পারে। পাকিস্তান এবং পেঁয়াজ রফতানিকারক অন্যান্য দেশগুলি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে বলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শরদ।
অন্য একটি টুইটে শরদ পওয়ার বলেছেন, ‘‘আমি এটাও জোর দিয়ে বলেছি যে, এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান এবং পেঁয়াজ রফতানিকারক অন্যান্য দেশ।’’ তাঁর দাবি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। সারা ভারত কিসান সভার নেতা অজিত নাভালের মন্তব্য, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ এবং তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ সামনে বিহার নির্বাচন। এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়লে চাপে পড়তে পারে শাসক দল। তাই এ ভাবে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নাভালে।
খুলনা গেজেট/এমআর