১৮ ফেব্রুয়ারি হামলার বিচারের জন্য নতুন তদন্ত কমিটি গঠন এবং পূর্ববর্তী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাতিল করে নতুন এক্সটার্নাল সদস্যসহ নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৮ ফেব্রুয়ারির বিচার করা এবং একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস পরীক্ষা চালু করার জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটের শিক্ষার্থীবৃন্দ নবাগত উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লেখা ওই আবেদনে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সংগঠিত ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটির স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে আমরা শঙ্কিত এবং চিন্তিত।
নিম্নোক্ত সংযুক্তির মাধ্যমে তা প্রকাশ করা হলোঃ
প্রথমতঃ উক্ত তদন্ত কমিটি শুধুমাত্র ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল-স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত হামলার বিচারের জন্য তৈরি করা হলেও পরবর্তীতে উক্ত তদন্ত কমিটি ১৯,২০,২১,২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এমনই হল ভেকেন্ট পর্যন্ত তদন্ত করে আন্দোলনকারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ এক সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বহিষ্কার দেয়া হলেও পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়।
তৃতীয়তঃ ছাত্রদলের সম্পাদকের কাছে বহিষ্কারের তালিকা তুলে দেওয়া হয়।
চতুর্থতঃ আন্দোলনরত ফ্রন্টলাইনারদের বিভিন্ন শিক্ষক এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স দিয়ে বহিষ্কার থেকে নাম তোলানোর জন্য আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য আপোষ করতে বলা হয়।
পঞ্চমতঃ প্রাক্তন উপাচার্য পতনের পরে ৩৭ জনের শাস্তিপ্রাপ্ত তালিকা তদন্ত কমিটির সদস্য অথবা প্রাক্তন ভিসি মতাদর্শী শিক্ষকদের দ্বারা পরিবর্তন করা হয়।
ষষ্ঠতঃ কুয়েটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ছাত্রদলের কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সপ্তমতঃ রাজসাক্ষী দেয়ার জন্য শাস্তি মওকুফ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
অষ্টমতঃ শোকজ হিসাবে প্রতিবাদকে অপরাধের আওতায় ফেলানো হয়।
নবমতঃ আন্দোলনকারী ৭ জন ফ্রন্টলাইনার যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে আবারো ৩৭ জনের তালিকায় সংযুক্ত করে হেনস্থা করা হয়।
দশমতঃ তদন্ত কমিটির একজন শিক্ষক শিক্ষার করেন যে, জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে উনার মতবাদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
একাদশতমঃ তদন্ত কমিটির প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যরা প্রাক্তন ভিসি’র পক্ষে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়ায়।
দ্বাদশতমঃ তদন্ত কমিটির প্রধান তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রদানের পূর্বেই ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল বিএনপি কর্তৃক হামলায় রক্তাক্ত হওয়াকে সাজানো নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ত্রয়োদশতমঃ একই ব্যক্তি (শিক্ষক) তদন্ত কমিটি এবং ডিসিপ্লিন কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থানে রয়েছেন।
উপাচার্য বরাবর লিখিত উক্ত আবেদনের শেষ প্যারায় শিক্ষার্থীবৃন্দ উল্লেখ করেন, উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী বিনীত প্রার্থনা এই যে, আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রকাশকৃত তালিকা বাতিল করে নতুন এক্সটার্নাল সদস্যসহ নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির গঠন করে ১৮ ফেব্রুয়ারির বিচার করা এবং একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস, পরীক্ষা চালু করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
এদিকে বুধবার (১৪ মে) বিকাল ৫ টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ারের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ের ঘোষণা দিয়েও উপাচার্যের অনুরোধের কারণে প্রেস এ ব্রিফিং থেকে বিরত থাকেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ রাহাতুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, পূর্ববর্তী তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন জানিয়ে গতকাল উপাচার্যের কাছে আমরা যে লিখিত আবেদন করেছিলাম সেটির আপডেট জানার জন্য আজ বিকালে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের কক্ষে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। এ সময় উপাচার্য আমাদেরকে বলেন তোমরা আমার উপর আস্থা রাখো এবং তিনি আজ আমাদেরকে প্রেস ব্রিফিং থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। উপাচার্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজ আমরা প্রেস ব্রিফিং থেকে বিরত থাকি।
খুলনা গেজেট/এমএনএস