পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপ ও বাহারছড়ার আইসি লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করে টেকনাফ মেজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। আদালত র্যাবকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে মামলাটি দাখিল করেন তিনি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে সেখানে যান তিনি। তার সঙ্গে পরিবারের আরও অন্য সদস্যরাও রয়েছেন।
মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, আদালত মামলাটি র্যাবকে সুপারভাইজ করতে বলেছেন। সেইসঙ্গে সাত দিনের মধ্যে মামলার কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া সাংবাদিকদের জানান, মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসকে। মামলার বাকি আসামিদের নাম শারমিন জানাননি।
শারমিন আরো বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছেন ৩১ জুলাই রাতে। (টেকনাফ) থানা থেকে আমাদের বলা হয়নি, আমাদের ভাই মারা গেছে। পরদিন সকালে আমাদের বাসায় পুলিশ এসেছে। তারাও বলেনি, আমার ভাই মারা গেছে। আমরা চাচ্ছি, আমার ভাই হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর করতে। এ জন্য আদালতে মামলা করেছি।’
মঙ্গলবার সকালে এই সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তদন্ত কাজ শুরু করে কমিটি। ওইদিন তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান কক্সবাজারে পৌঁছে সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে এক সমন্বয় সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরে তা পুনর্গঠন করা হয়।
গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে।
ওই ঘটনার পর ২ আগস্ট কক্সবাজারে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. জাকির হোসেন। সোমবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ পরিদর্শন করেন ডিআইজি। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে কিছুই বলেননি।
এদিকে, মঙ্গলবার অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদের মা’কে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
খুলনা গেজেট / এমএম