‘তারা আমার সঙ্গে অনেক রাফ ব্যবহার করেছে। বলে, তোর নাম হিরো আলম; তুই নাম চেঞ্জ করবি। এখন থেকে তুই হিরো আলম নাম পরিচয় দিবি না।… কেন নাম চেঞ্জ করব, ওরা নাম দিয়েছে নাকি আমাকে, না আমার কোনো ডিরেক্টর-প্রডিউসার নাম দিয়েছে? আমার নিজের নাম দেয়া, আমি নিজে এতদূর আসছি।’
আলোচিত কনটেন্ট মেকার হিরো আলম জানিয়েছেন, ডেকে নিয়ে রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি না গাওয়ার মুচলেকা আদায়ের দিন গোয়েন্দা পুলিশ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তুই তোকারি করে কথা বলেছে। তার চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছে, তার মতো মানুষের নামের সঙ্গে ‘হিরো’ শব্দটি যায় না। সেটি পাল্টাতে হবে।
তবে পুলিশ যা-ই বলুক না কেন, নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়া ‘হিরো’ পাল্টানোর কোনো কারণ দেখছেন না তিনি। বলেছেন, এই নাম পুলিশ তাকে দেয়নি, তাই পুলিশের কথায় তিনি পাল্টাবেনও না।
কয়েক বছর ধরেই হিরো আলমকে নিয়ে তুমুল আলোচনা। তাকে নিয়ে হাস্যরস, কটাক্ষকে গায়ে না মেখে একের পর এক ভিডিও, গানসহ নানা কনটেন্ট তৈরি করে আসছেন তিনি।
ঈদুল ফিতরের পর হিরো তার চ্যানেলে ‘আমারো পরানো যাহা চায়’ গান প্রকাশের পর তুমুল সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে। পরে হিরো প্রথমবারের মতো নিজের গান অনলাইন থেকে সরিয়ে নেন। পাশাপাশি বলেন, তিনি উপলব্ধি করেছেন, রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া তার উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে তিনি আর গাইবেন না।
এর মধ্যে গত বুধবার হঠাৎ করেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে হিরোকে ডেকে নিয়ে রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি গাইবেন না।
পরে হিরো জানান, পুলিশ তাকে নাম পাল্টানোর নির্দেশও দিয়েছে।
কেন নাম পাল্টাতে বলেছে- এমন প্রশ্নে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “তারা আমার সঙ্গে অনেক রাফ ব্যবহার করেছে। বলে, ‘এই তোর চেহারা কোনোদিন আয়নাতে দেখেছিস, তুই নিজেকে হিরো বলিস, হিরো বলতে কী বোঝায় তুই বোঝা। তুই সিনেমা দেখিস না হিরোটা কী রকম হতে হয়? তোর নাম হিরো আলম; তুই নাম চেঞ্জ করবি। এখন থেকে তুই হিরো আলম নাম পরিচয় দিবি না’।”
আপনি কী বললেন- এমন প্রশ্নে হিরো বলেন, ‘আমি তো কোনো কিছু বলিনি, আমি চুপচাপ, দেখি তারা বলতে থাক। তারা কত কী বলতে পারে আমি দেখতে চাই আর শুনতে চাই।’
আপনি তাহলে নাম পাল্টাচ্ছেন না?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন নাম চেঞ্জ করব, ওরা নাম দিয়েছে নাকি আমাকে, না আমার কোনো ডিরেক্টর-প্রডিউসার নাম দিয়েছে? আমার নিজের নাম দেয়া, আমি নিজে এতদূর আসছি।’
তবে পুলিশের কিছু নিষেধ মেনে চলবেন বলেও জানান হিরো। বলেন, ‘ওদের সমস্যা হয়েছে, ওরা পুলিশের পোশাক পরতে নিষেধ করেছে, পরলাম না। তারপর নজরুলগীতি, পল্লিগীতি গাইতে মানা করছে- গাইলাম না সমস্যা কী?’
তবে পুলিশের এই নিষেধাজ্ঞা পছন্দ হয়নি হিরো আলমের। তিনি মনে করছেন, তার ব্যক্তিস্বাধীনতায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার তো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় তারা আঘাত দিতে পারে না। তারা যে কাজ করেছে, একজনের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় আঘাত করেছে। পুলিশের কোনো জায়গায় আইনে লেখা নাই- পুলিশ আমার কাছ থেকে মুচলেকা নিতে পারবে যে তুই গান গাইতে পারবি না। এই কথা পুলিশের কোনো আইনে লেখা নেই।’
পুলিশের এই কাণ্ডের প্রতিবাদে হিরো নতুন একটি গান প্রকাশ করেছেন। তিনি গানে বলেন, ‘আমার কী হবে গো, জেল হবে না ফাঁসি হবে/কী অপরাধে আমার সরল মনটা কান্দেরে বন্ধু?’ পরক্ষণেই তিনি আবার গেয়ে ওঠেন, সারা জীবন সকল কাজে পাইলাম শুধু বাধা/আমাকে আসামি করল ভাগ্যের গোলকধাঁধারে দয়াল, ভাগ্যের গোলকধাঁধা।’
বগুড়ায় ডিশ লাইনের ব্যবসা দিতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে ভিডিও ছেড়ে হিরোর কনটেন্ট তৈরির শুরু। পরে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে তৈরি হয় হাস্যরস। তবে দমে না গিয়ে, সমালোচনা গায়ে না মেখে একের পর এক ভিডিও বানাতে থাকেন তিনি। সেই সঙ্গে শুরু করেন গান।
পরে বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, হিন্দি, আরবি, চীনা এবং আফ্রিকান সোয়াহিলি ভাষায় গান তিনি। তৈরি করেন সিনেমা। লেখেন বই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি।
স্পষ্টতই সমালোচনা, কটাক্ষ গায়ে মাখছেন না হিরো আলম। মফস্বল থেকে উঠে এসে রাজধানীর বুকে তিনি অবস্থান নিয়ে যে বেশ আয় করছেন, সেটি তার জীবনাচরণেও ফুটে ওঠে। তিনি গাড়ি কিনেছেন, নিয়েছেন অফিসও।
তার জীবনের এই ঘটনার সঙ্গে গানের এই কলি ‘সারা জীবন সকল কাজে পাইলাম শুধু বাধা’র কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাওয়া হয় হিরোর কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই সেটা, ওটা নিয়ে মনের দুঃখ একটু প্রকাশ করলাম।’
খুলনা গেজেট / আ হ আ