খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পুরান ঢাকায় ভয়ঙ্কর রাসায়নিকের গুদাম, গ্রেফতার ৬

গেজেট ডেস্ক

পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে সরানো যাচ্ছে না অতিদাহ্য রাসায়নিকের গুদাম। এসব রাসায়নিক থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির পরও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। শুধু কিছুদিন পর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠান সিলগালা, জড়িতদের গ্রেফতার করে। কিন্তু আবাসিক এলাকা থেকে সরে না রাসায়নিকের গুদাম।

সোমবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর টিকাটুলিতে অভিসার সিনেমা হলের পাশে রাসেল স্কয়ার নামের একটি ১০তলা আবাসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দাহ্য রাসায়নিক জব্দ করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা এবং ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ইয়াসিন সায়েন্টিফিকের নুর হোসেন ও মোহাম্মদ শাহীন, যমুনা সায়েন্টিফিকের সজিব রানা, মোহাম্মদ মামুন হোসেন, মাহির ইন্টারন্যাশনালের সৈয়দ সাজ্জাদুল হাসান মাসুদ মডার্ন ও সায়েন্টিফিকের ইমরান হোসেন।

র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে ওয়ারী থানাধীন টিকাটুলি এলাকায় অভিসার সিনেমা হলের পাশে রাসেল স্কয়ার নামে একটি ১০তলা আবাসিক ভবনের পার্কিংয়ে বিভিন্ন ধরনের অতিদাহ্য রাসায়নিক মজুদ করে আসছিল ৫টি প্রতিষ্ঠান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বিকালে ওই গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আইসোপ্রোফাইল অ্যালকোহল, ইথানল, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, মিথানল, জাইলনসহ বিভিন্ন ধরনের অতিদাহ্য কেমিক্যাল জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিসি অফিস থেকে ওয়ারীর ২৭ রাসেল স্কয়ার আবাসিক ভবনের ঠিকানা উল্লেখ না করে শুধু ২৭ নজরুল ইসলাম সড়কে ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়েছেন তারা। কিন্তু আবাসিক ভবনে এসব মজুতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা লাইসেন্স তাদের নেই। ঝুঁকিপূর্ণ এসব রাসায়নিক পণ্য মজুদে যে ধরনের ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক সে ধরনের ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। আবাসিক ভবনে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্যের অবৈধ মজুদ থেকে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরান ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক এবং প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম আছে। সরকার বলছে, চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে চকবাজারের কয়েকশো রাসায়নিকের কারখানা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু পুরান ঢাকার বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে এসব কেমিক্যালের গোডাউন স্থাপন করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে রাখা কেমিক্যাল বিস্ফোরণে ৭৮ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর বেশ কয়েক দিন কেমিক্যাল গুদাম সরাতে অভিযান চালায় বিভিন্ন সংস্থা। চকবাজার ট্রাজেডির পর পুরোন ঢাকার বিভিন্ন অংশ থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরানোর দাবি নতুন করে আলোচনায় আসে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করে, সেগুলোর প্রধান সুপারিশের মধ্যে ছিল, আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়া এবং অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু তাতে প্রধান বাধা আসে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেই। নানা যুক্তি দেখিয়ে তারা সেখান থেকে কারখানা সরাতে চান না।

এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে নিমতলীতে রাসায়নিকের আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিমতলী ট্রাজেডির পর পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিক এবং অতিদাহ্য পদার্থের ব্যবসা এবং গুদাম সরানোসহ ১৭টি সুপারিশ দিয়েছিল সরকারি কমিটি। কিন্তু বছরের পর বছর বহাল তবিয়তেই চলতে থাকে। নিমতলী থেকে চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ড দেশের সীমা ছাড়িয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে বিশ্ব বিবেককেও। এর মাঝেও ঘটেছে ছোটখাটো বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ড। বরং প্রসার ঘটে বহুগুন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা এবং প্রভাবশালী মহলের কারণেই পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিকসহ অতিদাহ্য পদার্থের গুদাম সরানো সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র : যুগান্তর।

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!